এসিড বৃষ্টি কি বা কাকে বলে
যখন বায়ু বা বায়ুমণ্ডলের বৃষ্টির অম্লের পরিমাণ বেড়ে যায়
এবং pH এর মান ৫.৬ এর থেকে নিচে থাকে, তখন যেই বৃষ্টি হয় তাকেই এসিড বৃষ্টি বলে। এসিড
বৃষ্টিতে এসিড বা অম্লের পরিমাণ এবং উপাদান বেশি হওয়ায় এই বৃষ্টির নামকরন করা হয়েছে
এসিড বৃষ্টি। এসিড বৃষ্টির প্রধান উপাদান তিনটি যথা, সালফিউরাস এসিড (H2SO3),
সালফিউরিক এসিড (H2SO4) এবং নাইট্রিক এসিড (HNO3)।
যেইসব কলকারখানা বা এলাকা এসিড বৃষ্টির এই তিনটি উপাদান বেশি নিঃসরণ করে, সেইসব এলাকায়
এসিড বৃষ্টি বেশি হয়ে থাকে।
এসিড বৃষ্টির pH কত
সাধারণত এসিড বৃষ্টির pH ৫.৬ বা এর নিচে হয়ে থাকে। বায়ু দূষিত
কলকারখানা বা ইন্ডাস্ট্রি এলাকায় এসিড বৃষ্টির pH ৫.৬ থেকে ৩.৬ পর্যন্ত থাকে। এ পর্যন্ত
পৃথিবীর কোথাও এসিড বৃষ্টির pH এর পরিমাণ ১.৮ এর নিচে নামে নি।
এসিড বৃষ্টির কারন এবং কেন হয়
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ পরিবেশ এবং সুস্থ বায়ু অত্যন্ত
প্রয়োজন। বায়ু অনেক ধরণের পদার্থ বহন করে থাকে। আমাদের পৃথিবীর উপর রয়েছে বায়ুর স্থর
যাকে বলা হয় বায়ুমণ্ডল। এই বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন ধাপে ধাপে বায়ুর মধ্যে জমে থাকে ক্ষতিকর
পদার্থকে নিষ্কাশন করে দেয়। তবে, আমরা বুঝে হোক আর না বুঝে হোক, আমরা নিজেই নিজেদের
ক্ষতি করি থাকে। এসিড বৃষ্টির প্রধান কারন হচ্ছে বায়ু দূষণ। এই বায়ু দূষণ হচ্ছে মানব
সৃষ্ট। সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) ও নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO, NO2,
NO3) যখন বায়ুতে বেশি হয়ে যায়, তখন বায়ুর অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। যায় ফলে বৃষ্টির
পানিতে অম্ল বা এসিডের প্রাধান্য ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অম্ল বা এসিডের বৃদ্ধি পাওয়া
মানেই pH স্কেলের মান হ্রাস পাওয়া।
এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব
- মাঠির উর্বরতা হ্রাস : মাঠির মূল উপাদান হচ্ছে জিংক, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন। এইসব উপাদান মাঠিকে উর্বর করতে সাহায্য করে। এসিড বৃষ্টি মাঠির সাথে মিলে মাঠির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক অক্সাইড সমূহকে ধ্বংস করে ফেলে। যার ফলে মাঠির ক্ষয় সাধন হয় ও মাঠি অনুর্বর হয়ে যায়।
- জলজ প্রাণীর প্রজনন হ্রাস : খাল বিল, নদী নালায় অনেক ধরণের জলজ প্রাণী বাস করে। জলজ প্রাণীর বংশ বিস্তারের জন্য তাদের চারদিকের পানি ও পরিবেশ উপযোগী হতে হয়, নইলে বন্ধ্যাতার সৃষ্টি হয়। এসিড বৃষ্টি পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পানির pH এর মান কমিয়ে দেয়। পানির pH এর মান কমে গেলে জলজ প্রাণী বিশেষ করে মাছের ডিম পাড়া দুর্বিষহ হয়ে উঠে। যার ফলে পানিতে জলজ প্রাণীর সংখ্যা কমতে থাকবে।
- উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন : উদ্ভিদ তার বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য মাঠির উপর অনেকাংশ নির্বর। আমরা আগের জেনেছি, এসিড বৃষ্টির ফলে মাঠির ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। যার ফলাফল উদ্ভিদ সম্প্রদায়কেও ভোগ করতে হয়। এসিড বৃষ্টির ফলে উদ্ভিদের বীজের ক্ষতি হয় এবং বীজের অঙ্কুরোদ্গম ব্যাহত বা সঠিক ভাবে হয় না।
- বাড়ি বা অট্টালিকার ক্ষতি : আপনি স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করেন অনেক কষ্টের ফলে। আপনার স্বপ্নের বাড়িটির ক্ষতি করতে পারে এই এসিড বৃষ্টি। বাড়ির জানালায় বা দরজায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধাতুর তৈরি জিনিসকে নষ্ট করে দেয় এসিড বৃষ্টি। এসিড বৃষ্টিতে অম্লিয়তার পরিমাণ বেশি হওয়ায় ধাতুর অক্সাইডকে আক্রমণ করে নষ্ট করে ফেলে। এছাড়াও বড় বড় অট্টালিকার আকর্ষনীয় নকশা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এসিড বৃষ্টি থেকে কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে?
- কৃষি জমিতে বা পানি নির্ভর জলাশয় ও জলাবদ্ধ এলাকায় চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন একটি ক্ষার জাতীয় পদার্থ। চুন ব্যবহারে এসিড যুক্ত পানির pH পরিমাণ বেড়ে যায়।
- যেসব যন্ত্র বা যানবাহন সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড যুক্ত যৌগ নিঃসরণ করে থাকে, তা ব্যবহার বন্ধ করা অথবা তার বিকল্প তৈরি করা।
0 মন্তব্যসমূহ