পৌরনীতির সংজ্ঞা কি বা কাকে বলে
পৌরনীতি হচ্ছে
নাগরিক বিষয়ক শাস্ত্র যা প্রত্যেক মানব নাগরিকের অধিকার, কর্তব্য ও নাগরিক সম্পর্কীয়
সকল বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করে। বিজ্ঞানের দিক থেকে, পৌরনীতি হচ্ছে এক নাগরিক কেন্দ্রীক
বিজ্ঞান। পৌরনীতিকে নাগরিকের আচরণ, কার্যাবলির এবং নীতি প্রয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞানও
বলা হয়ে থাকে। মানব নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
সকল ধরণের বিষয় বিজ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে, তাকে পৌরনীতি বলে। পৌরনীতি নাগরিক ও
রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। নাগরিকের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ঘটে
যাওয়া সকল অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঘটনার নীতি নির্ধারক হচ্ছে। নাগরিকের জীবনের অন্যতম
দর্পণ হচ্ছে পৌরনীতি। পৌরনীতির সাথে অর্থনীতি, সামাজিক বিদ্যা, রাষ্ট্র বিদ্যা, ভূগোল,
ইতিহাস, নীতি বিদ্যা এবং ইতিহাস শাস্ত্রের সম্পর্ক আছে। পৌরনীতির জনক এরিস্টটলকে বলা
হলেও, আধুনিক পৌরনীতির জনক হচ্ছেন বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন।
পৌরনীতির শব্দের উৎপত্তি
পৌরনীতির
পৌর শব্দটি পুর শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে নগর। এখানে, পুর শব্দটির বিশেষন
হচ্ছে পৌর এবং পৌর শব্দটি নাগরিক শব্দকে সমর্থন করে। পৌরনীতিকে এক কথায় নাগরিকের নীতি
বলা যেতে পারে। সংস্কৃত শব্দ নগরকে পুর বা পুরী বলা হয় এবং পুর আর পুরী তে যে মানব
সম্প্রদায় নিয়ম নীতি মেনে বসবাস করে তাদেরকে পুরবাসী বলা হয়ে থাকে। আবার, ইংরেজি
CIVICS শব্দ থেকে পৌরনীতি শব্দটির উদ্ভব হয়।
পৌরনীতি একটি
নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান
পৌরনীতির
মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিক জীবনের সকল ধরণের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা
ও অনুশীলন করা। নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হচ্ছে সেই বিজ্ঞান যা নাগরিক এবং নাগরিক জীবনের
সকল বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করে। যেহেতু পৌরনীতি নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য, সুশাসন,
সুরক্ষা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় নীতি ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে বিবেচনা
ও আলোচনা করে, তাই পৌরনীতিকে একটি নাগরিকতা
বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়ে থাকে।
পৌরনীতি
পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যাসহ
একজন নাগরিকের
জন্য পৌরনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৌরনীতি পাঠের প্রধান তিনটি প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হল।
পৌরনীতি নাগরিকের
অধিকার নিয়ে আলোচনা করে : পৌরনীতি পাঠে একজন নাগরিক সর্বপ্রথম তার নিজের অধিকার সম্পর্কে
জানে। নাগরিক রাষ্ট্র থেকে কি কি সুযোগ সুবিধা পাবে তা নিয়ে পৌরনীতি আলোচনা করে। কথা
বলার অধিকার, চলাফেরার অধিকার, ধর্মীয় অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার ইত্যাদি
অধিকার হচ্ছে নাগরিকের অধিকার যা পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
পৌরনীতি নাগরিকের
কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে : স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি একজন নাগরিক কিছু কর্তব্য
থাকে। নাগরিক তার কর্তব্য নিজ নিজ স্থান থেকে সচেতনভাবে পালন করলে, একটি রাষ্ট্র তার
উন্নতির শিখায় পৌছাতে পারে। সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত নীটি মেনে চলা একজন সচেতন নাগরিকের
কর্তব্য। এই সবকিছু আলোচনা করে পৌরনীতি।
পৌরনীতি নাগরিকের সুশাসন নিয়ে আলোচনা করে : নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ সংবিধানে রচয়িত থাকে। সংবিধান ও সরকার দ্বারা নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য পৌরনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরকার দ্বারা নাগরিকের সুশাসন ও সুরক্ষা অত্যাবশকীয়। একজন নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ধারন হয় রাষ্ট্রের সুশাসন ও সুনীতি দ্বারা, যা পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে আহরণ করা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ