মদিনা সনদের ধারা কয়টি ও কী কী
৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে
মহানবী (সা.) কর্তৃক ঘোষিত মদিনা সনদ ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। অশান্তি দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার
মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ রচনায় এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সনদ সম্পর্কে ঐতিহাসিক
P. K. Hitti বলেন, “আল মদিনার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের
মধ্য থেকেই পরে বৃহত্তর ইসলামি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।" (Out of the
religious community of Al Madinah the later and
larger state of Islam arose.)
মদিনা সনদের প্রধান ধারাসমূহ বা শর্তাবলি
মদিনা সনদে মোট
৪৭টি ধারা লিপিবদ্ধ ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সনদ হিসেবে এর গুরুত্ব
অপরিসীম। নিম্নে মদিনা সনদের প্রধান প্রধান ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো।
১. সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান
সকল সম্প্রদায় সমানভাবে নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি সাধারণ জাতি (Commonwealth) গঠন করবে।
২. হযরত
মুহাম্মদ (সা.) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকারবলে তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের
সর্বময় কর্তা হবেন।
৩. পূর্ণ
ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কেউ কারও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধার সৃষ্টি করতে
পারবে না।
৪. কেউ
কুরাইশদের সাথে গোপন আঁতাত কিংবা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজে লিপ্ত হতে
পারবে না ।
৫. কোনো
গোত্র বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে সমবেত প্রচেষ্টায় তা প্রতিহত করবে।
৬. যুদ্ধের
ব্যয়ভার সকল গোত্রের লোকজন সমভাবে বহন করবে।
৭. স্বাক্ষরকারী
সম্প্রদায়ের মধ্যে কেউ কোনো অপরাধ করলে তা কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এজন্য কোনো গোত্রকে দায়ী করা যাবে না।
৮. মদিনা
শহরকে পবিত্র শহর বলে ঘোষণা করা হলো। রক্তপাত, হত্যা ও অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ
একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।
৯. অপরাধীকে
উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং সকল প্রকার পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।
১০. ইহুদিদের
মিত্ররাও সমান স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।
১১. দুর্বল ও
অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
১২. হযরত মুহাম্মদ
(সা.) এর অনুমতি ছাড়া মদিনাবাসিগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩. স্বাক্ষরকারী
সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) তা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী
ফয়সালা করবেন।
১৪. সনদের শর্ত
ভঙ্গকারীর উপর আল্লাহর গজব বা অভিসম্পাত বর্ষিত হবে।
১৫. ইহুদি কিংবা মুসলমান শত্রুপক্ষীয়
কোনো কুরাইশকে কেউ আশ্রয় দিতে পারবে না।
১৬. কোনো স্ত্রীলোককে
তার গোত্রের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো গোত্র আশ্রয় দিতে পারবে না।
১৭. প্রত্যেক
লোক তার নিজের পক্ষের নিকট থেকে তার প্রাপ্য অংশ পাবে।
১৮. কুরাইশ বা
তাদের সাহায্যকারীকে আশ্রয় দেওয়া যাবে না।
১৯. যদি কেউ
অন্যায়ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে এবং তা প্রমাণিত হয়, প্রতিদানে তাকেও হত্যা করা
হবে। যদি নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী রক্ত গ্রহণ করতে চান তাহলে তাকে
হত্যা করা হবে।
২০. প্রতিটি
সেনাদল যারা আমাদের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করবে তারা পর্যায়ক্রমে একদল অপর দলের স্থলাবতী
হবে।
২১. মুত্তাকি
মুমিনরা সর্বোত্তম ও সঠিক হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত।
২২. আল্লাহ এবং
হযরত মুহাম্মদ (সা.) সৎ ও ধর্মভীরুদের রক্ষাকারী।
পরিশেষে বলা
যায় যে, মদিনার সনদ হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে ম্যাগনাকাটা স্বরূপ। বস্তুত মদিনার ইসলাম প্রচারে এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করেছিল। রাজনৈতিক, সামাজিক,
ধর্মীয় ও নাগরিক জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে মদিনার সনদ। মুসলমানদেরকে নিরাপদ
রেখে ইসলাম প্রচারে এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
0 মন্তব্যসমূহ