পেশা কি এবং পেশার বৈশিষ্ট্য কি কি

 

পেশা কি পেশার বৈশিষ্ট্য

মানুষ বিভিন্ন কাজ করে জীবিকানির্বাহ করে থাকে। তবে এসব কাজের ক্ষেত্রে কখনও বুদ্ধিমত্তা, বিশেষ যোগ্যতা, দক্ষতা ও নৈপুণ্যভিত্তিক জ্ঞান থাকা দরকার। আবার কখনও সাধারণ বুদ্ধি ও শারীরিক যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে যে কোন পেশার কতিপয় মানদণ্ড দরকারি হয়ে পড়ে। পেশাদার সমাজকর্মের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না হলেও এটি সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশ ও প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। সমাজকর্ম মূলত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভৃতি অবস্থার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট এক পেশা। এটি মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর মানবতাবাদী আন্দোলন, বিভিন্ন বাস্তব সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্যাবস্থার উন্নয়ন, সমাজ সংস্কার, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং বিভিন্ন স্তর ও ঘাতপ্রতিঘাত অতিক্রম করে শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগে আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং শিক্ষণ কোর্স প্রবর্তনের মাধ্যমে এটি পেশাদারি মর্যাদায় উন্নীত হয়। এটি এখনও বিকাশমান পেশা।

পেশা কি (What is Profession)

সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের আওতায় কোন বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান ও নৈপুণ্য অর্জন করে তার সাহায্যে জীবিকা অর্জনের উপায়কে পেশা বলে। পেশা হতে হলে জীবিকা অর্জনের পন্থা বা বৃত্তিকে অবশ্যই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন এবং বিশেষ নীতিমালা ও মূল্যবোধসম্পন্ন হতে হবে। পেশা কাকে বলে? তাঁর সঠিক সংজ্ঞা কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানীরা দিয়েছেন।

পেশার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উইলবার্ট ই মোর (Wilbert E. More) তাঁর The Profession: Roles and Rules' গ্রন্থে বলেছেন, “পেশা হলো একটি সার্বক্ষণিক কর্ম, সেবাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগীদের নিয়ে আলাদা পরিচিতি, বিশেষায়িত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, সেবামুখিতা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্বাতন্ত্র্যবোধ।”

কমশন এবং গ্যালাওয়ে (Comption & Galaway) বলেছেন, “পেশা হলো সুসংগঠিত তত্ত্বনির্ভর জ্ঞান, যা মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত এবং বাস্তবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।”

এ. ই. বেন (A. E. Benn) বলেছেন, “পেশা হলো অন্যকে নির্দেশনা, পরিচালনা বা উপদেশ প্রদানের এমন এক ধরণের দক্ষতা, যার জন্য বিশেষ জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হয়।”

উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি, পেশা হলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতা, দক্ষতা ও মর্যাদাসম্পন্ন এমন কোন বৃত্তি, যার জন্য সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের আওতায় তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করতে হয়।

পেশার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of profession)

প্রত্যেকটি পেশা স্বীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সমাজবিজ্ঞানিগণ পেশার ভিন্ন ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী William E. Wickenden পেশার ছয়টি বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো,
১. জ্ঞান ও দক্ষতা,
২. জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা কর্মসূচি,
৩. বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলি, প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা,
৪. নৈতিকতাভিত্তিক বিশেষ নীতিমালা,
৫. রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি ও
৬. পেশাগত সংগঠন।

সমাজবিজ্ঞানী Ernest Greenwood পেশার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলো,
১. সুসংগঠিত তত্ত্ব (Systematic Theory),
২. পেশাগত কর্তৃত্ব (Authority),
৩. সমাজের স্বীকৃতি (Community Sanction),
৪. পেশাগত নৈতিক মানদণ্ড (Ethical code) ও
৫. পেশাগত সংগঠন (Professional organization)।

সমাজবিজ্ঞানী Warner Boehm পেশার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা,
১. জনকল্যাণমুখিতা,
২. প্রচারযোগ্য বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান,
৩. পেশাগত মূল্যবোধ,

৪. দক্ষতা ও কর্ম পদ্ধতি এবং
৫. সুসংগঠিতভাবে পেশার মানোন্নয়নের জন্য শক্তি ও প্রচেষ্টা।

Banjamin E. Youngdahl & Nathan E. Cohen পেশার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা,
১. বিশেষ দক্ষতা,
২. স্বতন্ত্র প্রয়োগ কৌশল,

৩. পেশাগত সংগঠন,
৪. নৈতিক মানদণ্ড এবং
৫. পেশাদার ব্যক্তির দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা।

আমেরিকার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Walter A. Friedlander তাঁর 'Introduction to Social Welfare' গ্রন্থে পেশার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেছেন। যথা,
১. বিশেষ যোগ্যতা (বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে),
২. বিশেষ দক্ষতা (প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে),
৩. পেশাগত সংগঠন,
৪. পেশাগত নৈতিক মানদণ্ড এবং
৫. পেশাগত দায়িত্ববোধ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ