মদিনার সনদকে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান বা ম্যাগনাকাটা বলা হয় কেন

 

মদিনার সনদকে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান বা ম্যাগনাকাটা বলা হয় কেন

মদিনার সনদকে ইসলামের ইতিহাসে ম্যাগনাকাটা বা প্রথম সংবিধান বলা হয় কেন

মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় এসে তিনি পাঁচ শ্রেণির লোক দেখতে পান। তিনি মদিনায় বসবাসরত এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। মদিনাবাসী ও মদিনার আশপাশে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন, শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (সা.) একটি সন্ধি বা সনদ ও প্রণয়ন করেন সকল গোত্রের সম্মতিতে। ইসলামের ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে এটি মদিনা সনদ নামে পরিচিত।

মদিনার সনদকে প্রথম সংবিধান বা ম্যাগনাকাটা বলার কারণ

ইসলামের ইতিহাসে মদিনার সনদকে প্রথম সংবিধান বলার কারণ সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. প্রথম লিখিত সংবিধান: একটি সরকার তথা রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন Executive, Legisletive এবং Judiciary ক্ষমতা। এ সনদের ২৪, ২৬, ৪৬ নং ধারায় মহানবীকে একাধারে মদিনা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক, আইন এবং বিচারবিষয়ক সর্বোচ্চ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। তাছাড়া সম্পূর্ণ দলিলখানিই একটি আইন। সুতরাং এ সংবিধান নিঃসন্দেহে মদিনায় একটি রাষ্ট্র গঠনের ভূমিকা পালন করে এবং এক্ষেত্রে এটিই প্রথম মৌলিক আইন বা লিখিত সংবিধান।

২. ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন: সনদের ২৬ থেকে ৩৭ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের সাথে একই উম্মাভুক্ত। এ উম্মা ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাপারে। এক্ষেত্রে উম্মা শব্দটি নাগরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার প্রধান ছিলেন মহানবী (সা.)। তাই এটা প্রমাণ করে যে, এ সনদ দ্বারা মদিনার রাজনীতি তথা ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করা হয়েছে।

৩. রাজনৈতিক ঐক্য: এই সনদে সকল লোকদের নিয়ে উম্মা গঠন করা হয়েছে। যাঁ সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে অতীব জরুরি।

৪. মৌলিক আইন: সনদটি ছিল একটি মৌলিক আইন। এতে মদিনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্পর্ক, কর্তব্যবোধ, অধিকার ও বিভেদ দূরীকরণার্থে আইন প্রণীত হয়েছে যা একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র গঠনে অতীব প্রয়োজন।

৫. ধর্মীয় উদারতা: মদিনা সনদের মাধ্যমে মহানবী (সা.) ধর্মের ব্যাপারে যে উদারনীতির পরিচয় দেন তা তৎকালীন বিশ্বের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ সনদ মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিশ্চয়তা বিধান করে।

৬. ঐশীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: মদিনা সনদ দ্বারা মদিনার গোত্রপ্রধানের হাত হতে আল্লাহ ও রাসূলের হাতে ক্ষমতা অর্পিত হয়। আল্লাহর সার্বভৌম প্রভুত্বের কথা আরবাসীর নিকট প্রচারিত হয় এবং তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। ফলে ঐশীতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, মদিনা সনদ হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা স্বরূপ। বস্তুত মদিনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও নাগরিক জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে মদিনা সনদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ