ওমর খৈয়াম
ওমর খৈয়াম ছিলেন মধ্যযুগীয় পারস্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
এক সাহিত্যিক। জীবনের প্রতিটি শাখায় তার সাহিত্যের পদচারণা লক্ষ্য করা যায়। জীবন রহস্য ছিল তার
সাহিত্যকর্মের মূল বিষয়বস্তু। সুখ-দুঃখের অতল গহ্বরে তিনি অনায়াসে প্রবেশ করতে পারতেন। যে সকল মুসলিম মনীষীদের
জ্ঞানসাধনা ও চিন্তাভাবনা বিশ্বের বুকে এক নয়া প্রাণবন্ত ও গৌরবোজ্জ্বল কৃষ্টি ও কালচারের সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে ওমর
খৈয়াম অন্যতম। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতির্বিদ, অঙ্কশাস্ত্রবিদ,
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ছিলেন। আব্বাসীয়
শাসনামলের মুসলিম বিত্তশালীদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিত্ব।
ওমর খৈয়াম এর জন্ম ও পরিচয়
ওমর খৈয়াম ১০৩৮ থেকে ১০৪৮
খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় পারস্যের খোরাসানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মালিকশাহ
সেলজুকের সমসাময়িক। অনেক ইতিহাসবিদের মতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর কিছু পূর্বে
ওমর খৈয়াম জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম হলো
গিয়াসউদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়ামী। তার পিতার নাম ইব্রাহিম আল খৈয়াম। তার পিতা একজন তাঁত ব্যবসায়ী
ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পেশা পরিবর্তন করে তাঁবু নির্মাতার কাজ শুরু করেন। ওমর খৈয়ামী তার পৈতৃক ব্যবসায় থেকে খৈয়ামী
(তাঁবুওয়ালা) নিসবা গ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন
ওমর খৈয়াম ছোটবেলায় বালি
শহরে সে সময়কার বিখ্যাত পণ্ডিত শেখ মুহাম্মদ মানসুরীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন। এরপর ওমর খৈয়াম ইমাম
মুয়াফিকের অধীনে পড়াশোনা করেন এবং শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। শিক্ষণীয় বিষয় অতি
সহজে তার হৃদয়ঙ্গম হতো। তার আরবি ও ফরাসি
ভাষাতত্ত্বে যথেষ্ট দখলে ছিল। তিনি দর্শন, তর্কশাস্ত্র, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও
জ্যোতিষ শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেন।
কর্মজীবন
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে তিনি
নিশাপুরের বিখ্যাত কলেজেই অধ্যাপনা শুরু করেন এবং শীঘ্রই শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। আর
যশ ও খ্যাতির সংবাদ তৎকালীন সেলজুক বংশের উজিরে আজম নিজামুল মুলক ও সুলতান মালিক শাহ সেলজুকের নিকট পৌঁছে। সুলতান মালিক শাহ
ওমর খৈয়ামকে তার খাস দরবারে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ১০৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ওমর খৈয়াম সেলজুক সুলতান মালিক
শাহের অনুরোধে রাজকীয় মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মানমন্দিরে তিনি গবেষণা করে একটি সৌর বর্ষপঞ্জি আবিষ্কার করেন এবং
সুলতান জালাল উদ্দিন মালিক শাহের নামানুসারে সৌর পঞ্জিকার নাম দেন জালালী পঞ্জিকা। তিনি বীজগণিতে এলজাবরার সমীকরণ
বিন্যাসের নিয়মকানুন, জ্যামিতি সমাধানে বীজগণিত এবং বীজগণিত সমাধানে জ্যামিতির ব্যবহার আবিষ্কার করেন।
গ্রন্থাবলি
ওমর খৈয়াম কতকগুলো গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন তার সঠিক
হিসাব পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেন তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪টি। আবার কেউ কেউ বলেন ২৩টি। তার রচিত
গ্রন্থসমূহের মধ্যে “আল জিবার” হলো শ্রেষ্ঠ। এছাড়া তিনি রুবাইয়াত বাইনোমিয়াল হিডিয়াম গ্রন্থ রচনা করেন।
মৃত্যু
ওমর খৈয়াম ১১২৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। কেউ
কেউ বলেছেন ১১২৪ খ্রিষ্টাব্দে ওমর খৈয়াম মৃত্যুবরণ করেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ব্রাউন বলেছেন,
ওমর খৈয়াম ১১১০ থেকে ১১৩৫ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
0 মন্তব্যসমূহ