বায়ুচাপের তারতম্যের কারণসমূহ

 

বায়ুচাপের তারতম্যের কারণসমূহ

পৃথিবীকে বেষ্টন করে রায়ু কতকগুলো গ্যাসীয় উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। অন্যান্য পদার্থের ন্যায় এর ওজন ও চাপ আছে। বায়ুর চাপ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। পৃথিবীর চাপ বলয়গুলো অক্ষাংশ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় চাপের তারতম্য ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়। আবহাওয়া, ভূমিরূপ, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশে, সূর্যের তাপের তারতম্য, জলবায়ু ও আহ্নিকগতি প্রভৃতি কারণে বায়ুচাপের তারতম্য হয়ে থাকে।

বায়ুচাপের তারতম্যের কারণসমূহ

বায়ুচাপের তারতম্য সাধারণত পাঁচটি কারণে হয়ে থাকে। নিম্নে বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।

১. বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য

সাধারণত বায়ুতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে তা প্রসারিত ও হালকা হয়ে ক্রমে ঘনত্ব কমে যায় । ফলে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়। এতে উক্ত বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেশি বলে উষ্ণবায়ুপ্রবাহিত অঞ্চলে পানি রাশি থাকলে তাও আর্দ্র হয় এবং এতে বায়ুর চাপ কমে যায়। কিন্তু বায়ুতে তাপ হ্রাস পেলে তার বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। অর্থাৎ বায়ুর ওজন ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এতে উক্ত বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায়।

২. ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা

বায়ুচাপ ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর নিম্নস্তরে বেশি হয়। কারণ নিম্নস্তরে উপরিস্থিত সব বায়ু স্তরের ওজন পতিত হয়। এ কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে যতই ঊর্ধ্বগামী হয় বায়ুস্তরের ওজন ও গভীরতা ততই কমতে থাকে। সেজন্য বায়ুর চাপ ঊর্ধ্বস্তরে ক্রমশ কম। সাধারণত ৩০০ মিটার উচ্চতায় ৩০ মিলিবার হিসেবে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়।

৩. বায়ুর গভীরতার তারতম্য

বায়ুমণ্ডলের গভীরতা ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমান নয়। সাধারণত যেখানে বায়ুর গভীরতা বেশি থাকে সেখানে বায়ুর অণুর পরিমাণও বেশি থাকে। যার কারণে সেখানে বায়ুর চাপও বেশি। কিন্তু কম গভীরতাসম্পন্ন স্থানে বায়ুর পরিমাণ কম বলে তথায় বায়ুর চাপও কম হয়।

৪. বায়ুতে জলীয়বাষ্পের তারতম্য

বায়ুতে জলীয়বাষ্পের তারতম্যের কারণে বায়ুর চাপে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শুদ্ধ বায়ুর তুলনায় হালকা। আর্দ্র বায়ুর চেয়ে শুষ্ক বায়ুতে অধিক পরিমাণ নাইট্রোজেন (N2) ও অক্সিজেন (O2) থাকে। ফলে শুষ্ক বায়ু ভারী বলে এর চাপও বেশি যার কারণে বর্ষাকালের চেয়ে শীতকালে বায়ুর চাপ বেশি।

৫. পৃথিবীর গতিসমূহের প্রভাব

পৃথিবী সর্বদা একটি নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট গতিপথে পরিভ্রমণ করছে। আর এর কারণ পৃথিবীর আহ্নিকগতি ও বার্ষিক গড়ি। পৃথিবীর এ আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি অর্থাৎ পৃথিবীর আবর্তন ও পরিভ্রমণসহ সর্বপ্রকার কারণের সম্মিলিত কার্যকারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য হয়।

তাপমাত্রার বন্টনের ওপর ভিত্তি করেই মূলত চাপ বলয়গুলোর সৃষ্টি। আর পৃথিবীর জল ও স্থলভাগের বিভিন্ন অবস্থানের জন্য চাপগুলোর পরিবর্তন ঘটে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের জন্য চাপ বলয়গুলোরও কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে চাপ বলয়গুলোর বিন্যাসের বেশ পার্থক্য বিরাজমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ