কোন দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উপর ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য অনেকাংশে
নির্ভরশীল। যেহেতু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বা
সংস্থার সাথে সম্পর্কিত তাই এর উদ্দেশ্য বিশেষভাবে ঐ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার উদ্দেশ্যের
সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্থান-কাল-পাত্রভেদে ব্যবস্থাপনার
উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়। মুনাফা অর্জনই ব্যবস্থাপনার মুখ্য উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে Ansoff বলেছেন, “একটি প্রতিষ্ঠান মুনাফার
মাধ্যমেই এর উদ্দেশ্য অর্জন করে।
আবার পি. এফ. ড্রাকার (P. F. Drucker) বলেছেন, “অস্তিত্ব রক্ষাই একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য।“
ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যসমূহ
নিম্নে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যসমূহ আলোচনা করা হল।
১. মুনাফা অর্জন (Profit earning)
ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ও প্রধান উদ্দেশ্য
হচ্ছে মুনাফা অর্জন। সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান
পরিচালনায় শেয়ার মালিকগণ পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগের পিছনে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। তাই
ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধি করা এবং শেয়ার মালিক বা পুঁজি বিনিয়োগের উন্নয়ন করা ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
২. উপকরণাদির উন্নয়ন (Upgrading material)
ব্যবস্থাপনার সাফল্যের সাথে উপকরণাদির উন্নয়ন নিবিড়ভাবে জড়িত। উপকরণাদি বলতে ভূমি,
যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মূলধন, বাজার, পদ্ধতি ইত্যাদিকে বুঝায়। সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বস্তুগত উপকরণসমূহের উন্নয়ন
সাধন করে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের উপকরণাদির উন্নয়ন ঘটে এবং প্রতিযোগিতার
সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে।
৩. অস্তিত্ব রক্ষা (To save existence)
বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে সফলতার সাথে টিকে থাকার জন্য দক্ষতা সমৃদ্ধি ও সুনামের সাথে সম্পাদন
করতে হয়। সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ, উন্নয়ন সমৃদ্ধি অর্জন প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুদৃঢ় অবস্থান প্রদান
করে। তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ের অস্তিত্ব বজায় রাখা এবং ব্যবসায়ের সমৃদ্ধি অর্জন করা ব্যবস্থাপনার
একটি অন্যতম লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য।
৪. মানবশক্তির উন্নয়ন (Manpower development)
কারখানায় যোগ্য কর্মী বাছাই, মনোনয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নির্বাহিদের উন্নয়নের বন্দোবস্ত
করে মানবশক্তির উন্নয়ন ঘটানো যায়। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল প্রতিষ্ঠানের
জন্য যোগ্য কর্মী বাছাই, তাদের মনোনয়ন ও প্রতিষ্ঠানে
ধরে রাখা। এতে প্রতিষ্ঠানে দক্ষ মানবশক্তির সৃষ্টি হয়।
৫. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন (Developing of labor management relations)
প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত শ্রমিককর্মীবৃন্দের সাথে পারস্পরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে শলা পরামর্শ
করে ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে শ্রমিককর্মীবৃদ্ধ অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে শ্রম ব্যবস্থাপনা
সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। অথাৎ পারস্পরিক অংশগ্রহণের
মাধ্যমে সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করাই ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য।
৬. নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (Making and introduction of policy)
সাধারণ প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সাথে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে না পারলে সঠিক ও কার্যকর নীতিমালা
প্রণয়ন করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা ব্যাহত হয়। তাই আদর্শ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দ্বারা
প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে কাম্য গতিশীলতা বজায় রাখতে হয়। ফলে ব্যবস্থাপকের পক্ষে সহজে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর
হবে।
৭. সামাজিক দায়িত্ব পালন (Maintain social duties)
ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল সামাজিক দায়িত্ব পালন করা। বেকারত্ব দূরীকরণ
ক্রেতা ও উৎপাদকের স্বার্থ সংরক্ষণ, মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা, সরকারকে
রাজস্ব প্রদান ইত্যাদি সামাজিকসমূহ পালন করতে হয়।
এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে সমাজের একটি দায়িত্বশীল বাহন বলা যেতে পারে।
৮. উৎপাদনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি (Increasing quality of production)
ব্যবস্থাপনা নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদনের ক্ষেত্রে পণ্যের উৎকর্ষতা
বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে উৎপাদনের পরিমাণ ও উৎপাদিত
পণ্যের গুণগত মান বজায় থাকে।
৯. উদ্ভাবন (Innovation)
বর্তমানকালে ব্যবস্থাপনা নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের
উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা করে। ফলে দক্ষ ব্যবস্থাপনার
কারণে আজ নিত্যনতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে। তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ও ক্রমবর্ধমান প্রগতি এবং সমৃদ্ধির
পথে নিত্যনতুন কৌশল, পন্থা, কার্যধারা ইত্যাদি প্রবর্তন করাই ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
১০. বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন (Developing market system)
বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনও ব্যবস্থাপনার আরেকটি উদ্দেশ্য । এটি ব্যবস্থাপনার
একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন
ঘটানো।
সর্বশেষে বলা যায় যে, ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যসমূহ আবহমান ঘটনাচক্র
দ্বারা প্রভাবিত। সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সংগঠন সহজেই তার লক্ষ্যে
পৌঁছাতে পারে। ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য লক্ষ্য
হল ব্যবস্থাপনা ও সংগঠনের সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের
মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালনে যথাযোগ্য ভূমিকা
রাখা।
0 মন্তব্যসমূহ