বায়ুমন্ডলের স্তর বলতে কি বুঝায়
ভূপৃষ্ঠের ওপরে যে গ্যাসীয় আবরণ
পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তাকে বায়ুমন্ডল বলে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণের ফলে বায়ুমন্ডল
ভূপৃষ্ঠের গায়ে লেগে থাকে এবং পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে তা আবর্তিত হয়। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন স্থানে এর অবস্থান খুব বেশি হলেও বায়ুমন্ডলের
ঊর্ধ্বসীমা অনেক সুদূরপ্রসারিত। বায়ুমন্ডলের পাঁচটি স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারের পরবর্তী ধাপ স্ট্রাটোস্ফিয়ার।
এ অঞ্চলের প্রধান গ্যাস ওজোন গ্যাস। যা সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি শোষণ করে। বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস বায়ুমন্ডলে বায়ুরাশি স্তরে স্তরে সজ্জিত রয়েছে। এ
স্তরগুলো ক্রমশ ওপরের দিকে হালকা ও বায়ুমন্ডলে
ওপরের স্তরগুলো নিচের স্তরের ওপর অধিক চাপ প্রয়োগ করায় নিচের স্তর অত্যন্ত ঘন হয়।
বিজ্ঞানীগণ বায়ুমন্ডলের স্তর বলতে সাধারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কি.মি. বা ৬,০০০ মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে বুঝাতে চেয়েছেন। বিশাল বায়ুমন্ডল কতকগুলো স্তরের সমন্বয়ে গঠিত বায়ুমন্ডলের প্রতিটি স্তরের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। এই ৬০০০ মাইল অঞ্চল গ্যাসের অবস্থান, বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। যথা : সমমন্ডল ও বিষমমণ্ডল। সমমণ্ডল ও বিষমমণ্ডলকে আবার তাপ ও গ্যাসের ভিত্তিতে আরো কতটি উপভাগে বিভক্ত করা হয়, যেগুলো নিয়ে বায়ুমন্ডল গঠিত।
বায়ুমন্ডলের স্তর সমূহ
- ১. ট্রপোস্ফিয়ার
- ২. ট্রপোপস
- ৩. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
- ৪. ওজোনোস্ফিয়ার
- ৫. স্ট্রাটোপস
- ৬. মেসোস্ফিয়ার
- ৭. মেসোস্ফিয়ার
- ৮. আয়নোস্ফিয়ার
- ৯. সমতাপ
- ১০. নাইট্রোজেন
- ১১. অক্সিজেন
- ১২. হিলিয়াম
- ১৩. হাইড্রোজেন
বায়ুমন্ডলের স্তর সমূহের বর্ণনা
১. সমমণ্ডল
ভূপৃষ্ঠ হতে ঊর্ধ্বে প্রায় ১০,০০০ কি. মি. পর্যন্ত বায়ুমন্ডল বিস্তৃত থাকে। প্রায় ৩০ কি. মি. পর্যন্ত এ অংশে বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক গঠন বা বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে। যার ফলে বায়ুমন্ডলের এ স্তরকে সমমণ্ডল বা মেসোস্ফিয়ার বলে। বায়ুর তাপমাত্রা ও উপাদানের ওপর ভিত্তি করে সমমণ্ডলকে নিম্নোক্ত ৬টি স্তরে ভাগ করা যায়।
ক. ট্রপোস্ফিয়ার : বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর অর্থাৎ পৃথিবীর নিকটবর্তী স্তর হলো ট্রাপোম্পিয়ার। এর গভীরতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মেরুদ্বয়ে ৭ মাইল এবং নিরক্ষরেখার ১১ মাইল, গড় ৮ মাইল। জীবন ধারনের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় স্তর। তাই বায়ুমন্ডলের এ স্তরটি মানুষ ও অন্যান্য জীবজগৎ এর জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। বায়ুমন্ডলের এ স্তরে অধিকাংশ জলীয়বাষ্প থাকে। এখানে মেঘ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, কুয়াশা, ঝড়, বজ্রবিদ্যুৎ প্রভৃতি ঘটে থাকে। এখানে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য তাপের হ্রাস ঘটে এবং তাপ ও চাপের পার্থক্যের দরুন বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপস (Troposause) বলে। এ স্তরটিতে প্রায় ১ কি. মি. গভীরতা বিশিষ্ট বায়ু সর্বদা স্থির থাকে। তাপের তেমন পরিবর্তন না থাকায় একে সমোষ্ণ অঞ্চলও বলে। এখানে ধূলি-বালি ও জলীয়বাষ্প তেমন থাকে না । তাছাড়া এ স্তরে ঝড় বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব নেই বলে বিনা বাধায় বিমান চলাচল করে।
খ. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার : ট্রপোস্পিয়ারের ট্রপোবিরতির পর স্ট্রাটোফিয়ার স্তরের শুরু অর্থাৎ ট্রপোপসের ওপরে বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে। ট্রপোপস হতে এর বিস্তার প্রায় ৩২ কি. মি. ওপরের দিকে। এ স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উত্তাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখানকার বায়ুতে জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার পরিমাণ অতি নগণ্য এবং মেঘ প্রায় দেখা যায় না।
গ. ওজোনাস্ফিয়ার : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের
ওপরে প্রায় ১২ হতে ১৬ কি. মি. গভীরতা বিশিষ্ট স্তরকে ওজোনোস্ফিয়ার বলে। এ স্তরে প্রধান উপাদান ওজোন গ্যাস। সূর্য হতে
আগত অতিবেগুনি রশ্মি ওজোন গ্যাস সহজে শোষণ করে নেয়। যার কারণে এ স্তরে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি (প্রায় ১৭০° ফা.) পর্যন্ত
থাকে। বায়ুমন্ডলে ওজন স্তর না থাকলে অতি বেগুনি রশ্মির তাপ ভূপৃষ্ঠের ওপর পড়ত এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণিকুলের দেহ
পুড়ে যাওয়াসহ অন্ধ হয়ে যেত। ওজোন গ্যাস জীবকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে সহায়তা করছে।
ঘ. মেসোস্ফিয়ার : ওজোনোস্ফিয়ার থেকে প্রায় ৬০ হতে ৮০ কি. মি. পর্যন্ত স্তরকে মেসোস্ফিয়ার বলে। এ স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এখানে বায়ুর চাপ অত্যন্ত কম থাকে। মেসোস্ফিয়ার এর ঊর্ধ্ব সীমাকে মেসোপস বলে।
ঙ. আয়নোস্ফিয়ার : আয়নোস্ফিয়ার হলে মেসোপস এর ঊর্ধ্বে অবস্থিত স্তর। এখানে তাপমাত্রা এতই বেশি যে, তাপের পরিবহণ ক্ষমতা অতি সামান্য এবং বায়ু খুবই হালকা। তাই এ স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার নামেও অভিহিত করা হয়। এ স্তর হতে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। আয়নোস্ফিয়ার স্তরটি D, E, F এবং F, এ চারটি স্তরে বিভক্ত করা হয়।
চ. সমতাপ অঞ্চল : আয়নোস্ফিয়ার এর ওপরের স্তরই সমতাপ অঞ্চল, এটি সমমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর। এস্তরে তাপের কোনো পরিবর্তন নেই বলে একে সমতাপ অঞ্চল বলা হয়। এ স্তরের পর থেকেই বিষমমণ্ডল শুরু।
২. বিষমমণ্ডল
সমমন্ডলের ওপরের স্তর হলো বিষমমণ্ডল। এ স্তরে বায়ুর উপাদানগুলোর অনুপাত সমান থাকে
না এবং বায়ুমন্ডলের স্তরগুলোও সমদূরত্বে নেই বলে একে বিষমমণ্ডল বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০
কি. মি. ঊর্ধ্ব হতে প্রায় ১০,০০০ কি.
মি. ঊর্ধ্ব পর্যন্ত এ স্তরের বিস্তৃতি। বিষমমণ্ডলকে চারটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা
:
ক. নাইট্রোজেন
স্তর : এটি বিষমমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। এ স্তরের বিস্তৃতি ৯০ কি. মি. হতে প্রায় ২০০
কি. মি. ঊর্ধ্ব পর্যন্ত। এ স্তরটি প্রধানত নাইট্রোজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত।
খ. অক্সিজেন
স্তর : নাইট্রোজেন স্তরের উপরে ২০০ কি. মি. হতে প্রায় ১,১০০ কি. মি. পর্যন্ত বিস্তৃত
স্তরকে অক্সিজেন স্তর বলে। এ স্তরটি প্রায় সর্বোতভাবে অক্সিজেন অণু দ্বারা গঠিত।
গ. হিলিয়াম
স্তর : অক্সিজেন স্তরের ওপরে ১,১০০ কি.মি. হতে প্রায় ৩,৫০০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত
স্তরকে হিলিয়াম স্তর বলে। এ স্তরটি প্রধানত হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত।
ঘ. হাইড্রোজেন স্তর : হিলিয়াম স্তরের ওপরে ৩,৫০০ কি. মি. হতে প্রায় ১০,০০০ কি. মি. পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে হাইড্রোজেন স্তর বলে। এটি বায়ুমন্ডলের বিষমমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর। এখানে হাইড্রোজেন পারমাণুর ঘনত্ব কিছুটা হালকাভাবে অবস্থান করে । ফলে হাইড্রোজেন পরমাণুর ঘনত্ব অসীম মহাকাশের হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রায় সমান হয়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ