বর্তমান যুগ তীব্র প্রতিযোগিতার যুগ। আর এই তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে
টিকে থাকার জন্য ব্যবস্থাপনার
অবদান অনস্বীকার্য। এটি ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক জীবন পর্যন্ত সর্বত্র
ব্যাপৃত। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে
ব্যবস্থাপনা স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প কিংবা
সরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও
ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি
হিসেবে কাজ করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর।
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব নিয়ে ব্যবস্থাপনার ভূমিকা বা গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আলোচনা করা হল।
১. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার (Proper utilization of the resources)
উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ যেমন- ভূমি, শ্রম, পুঁজি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিকে
সঠিকভাবে ব্যবহার ও কার্যোপযোগী করে তোলার জন্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই উৎপাদনের উপকরণগুলোর
সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের
উপর প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন নির্ভরশীল।
২. সম্পর্ক উন্নয়ন (Development of relations)
উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম লক্ষ্য হল প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত সকল পক্ষের
মধ্যে উত্তম সম্পর্ক সৃষ্টি ও বজায় রাখা। ব্যবস্থাপনার ঐরূপ প্রচেষ্টা মানব সম্পর্ক
উন্নয়ন ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সহজতর করে।
৩. বৃহদায়তন উৎপাদন (Large scale of production)
বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থা খুবই জটিল। এছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে
থাকতে হলে দক্ষ ব্যবস্থাপনার একান্তই প্রয়োজন। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বৃহদায়তন ব্যবসায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোন বিকল্প
নেই।
৪. নেতৃত্ব প্রদান (Leading)
প্রত্যেক জাতীয় কার্যাবলি সম্পাদনে নেতৃত্ব আবশ্যক। একটি উত্তম
ব্যবস্থাপনা নেতৃত্বের গভীরতা ও প্রসারতার বহিঃপ্রকাশ।
ব্যবস্থাপন ছাড়া কোন তত্ত্ব বা মতবাদ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক নয়। সুতরাং দক্ষ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের গুরুত্ব
অপরিসীম।
৫. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency)
ব্যবস্থাপনার কাজ হল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অর্জন করা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো
দক্ষতার খেলায় মেতে উঠেছে। তাই ব্যবস্থাপনা কর্মীদের প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, গবেষণা ইত্যাদির মাধ্যমে সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিক
দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৬. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (Creation employment opportunity)
কর্মসংস্থানের সৃষ্টিতে পিনার অবদান দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপকীয় পদ্ধতি
প্রয়োগের মাধ্যমে নিত্যনতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিহার্য।
৭. উদ্দেশ্য অর্জন (Objective accomplishment)
একজন মৰি যেভাবে শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকাকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়, ব্যবস্থাপনাও
ঠিক তদ্রূপ বিচ্ছিন্ন উপকরণকে একত্রিত, সংহত ও সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে উদ্দেশ্য
অর্জন নিশ্চিত করে।
৮. অপচয় হ্রাস (Wastage reduction)
ব্যবস্থাপনার শ্লোগান হল “কম খরচে অধিক উৎপাদন"। তাই সার্বিক
অপচয় হ্রাস প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনকে
আরও সহজ করে তোলে। তাই ব্যবস্থাপনা অপচয় হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Development of standard of living)
উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বর্ধিত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, কম মূল্যে উন্নতমানের
পণ্য সরবরাহ ও তা সহজে প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করে ব্যবস্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development)
উৎপাদনের উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। সর্বশেষ প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ
ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১১. সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা (Social contribution)
ব্যবস্থাপনা একটি অত্যাবশ্যকীয় সামাজিক প্রক্রিয়া। সংক্ষেপে বলতে গেলে সামাজিক, অর্থনৈতিক,
ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সকল প্রকার কর্মকাণ্ডে ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
১২. গবেষণা ও উদ্ভাবন (Research and innovation)
ব্যবস্থাপনা বর্তমানে নিত্যনতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে নব নব দিগন্ত
নির্দেশ করছে। দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই আজ নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নয়ন
সহজ হচ্ছে।
১৩. জাতীয় উন্নয়ন (National development)
দক্ষ ব্যবস্থাপনা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে আজ জাপান এত বেশি সমৃদ্ধি লাভে
সমর্থ হয়েছে। ব্যবস্থাপনার সব কাজ প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সমাজ সর্বোপরি জাতীয়
উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। তাই জাতীয় উন্নয়নের
স্বার্থে ব্যবস্থাপককে দক্ষ হাতে চালনা করতে হবে।
১৪. বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা (Large scale of production)
বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি
সম্ভব নয়। বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা
পূরণ করে বিদেশে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করতে হবে এবং
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে। ব্যবস্থাপনা হচ্ছে তথ্য সরবরাহের অন্যতম মূল চাবিকাঠি। ব্যবস্থাপনা একটি উৎপাদন প্রক্রিয়ার
নিম্ন হতে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের তথ্য প্রদান করে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে এটি এক সাথে অনেক পণ্যের
উৎপাদন করতে পারে।
১৫. শ্রমিক-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন (Development of labour-management relation)
ধর্মঘটজনিত বা বিভিন্ন কারণে যদি দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেটাকে উন্নততর
করতে হলে অবশ্যই শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক
উন্নত করতে হবে।
১৬. অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন (Development of economics diplomating relation)
বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের অর্থনৈতিক অবস্থা বিরাজমান তা থেকে
উন্নততর করতে হলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে
অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে বিনিয়োগের ব্যাপারে ভালোভাবে আলোচনা করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবস্থাপনার উপরিউক্ত ক্ষেত্র ছাড়াও বহুল উৎপাদন,
শক্তিশালী সংগঠন সৃষ্টি এবং সামগ্রিক সাফল্য অর্জনে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক যুগে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন,
এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধেও ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট
গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, যে কোন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যার্জন তথা প্রতিষ্ঠানের
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য ব্যবস্থাপনার
কোন বিকল্প নেই। কেননা একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নির্ভর করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর।
0 মন্তব্যসমূহ