সমন্বয়ের গুরুত্ব
ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের
গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে, সমন্বয় ছাড়া সংগঠন দক্ষভাবে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। সমন্বয়ের অভাবে
মানুষের দেহে যেমন রোগের সৃষ্টি হয়, তেমনি সমন্বয় না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠানের দেহেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কোন সংগঠন
সমন্বয় ছাড়া চলতে পারে না। গতিশীল পরিবেশে বা পারিপার্শ্বিক অবস্থায় মানবীয় প্রচেষ্টায়ও পরিবর্তন আবশ্যক হয় এবং
পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা এবং অসামঞ্জস্য দূর করার লক্ষ্যে সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা
করা হলো।
১. ভারসাম্য আনয়ন (Creating
equilibrium) : ব্যবসায় সংগঠনে কর্মীদের কাজের মান ও মাত্রা হয় একেক রকম। কেউ ভালোভাবে কাজ করে, কেউ আবার বেশি
কাজ করে, অনেকে ভালোভাবে করতে পারে না, আবার কেউ বা কাজ করে ধীরে। এসব অসমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে সমন্বয়।
ফলে সকলের কাজের মান ও মাত্রা একই হয়ে ওঠে।
২. শৃঙ্খলা বিধান (Ruination
discipline) : কর্মীদের কর্মপ্রচেষ্টায় শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের জুড়ি নেই। সকল কাজের মধ্যে একতা বিধান করার ফলে
কাজের বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে যায়।
৩. বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য (Unity in variety) : যেখানে
অনেক মানুষ কাজ করে, সেখানে কাজের প্রকৃতি হয় অনেক রকম । মানুষের কাজের পদ্ধতি, চিন্তাধারা,
দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদিও পৃথক হয়ে থাকে। সমন্বয় এসব পার্থক্যের মধ্যে একতা বিধান করে।
৪. মনোবল উন্নয়ন (Developing morale) : সঠিক সমন্বয়
কর্মীদের মনোবল উন্নয়নের সহায়ক। সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে যে শৃঙ্খলাবোধ তৈরি হয়, এটি কর্মীদের
উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
৫. ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজে সহায়তা (Helps in
other managerial functions) : ব্যবস্থাপনার কতকগুলো কাজ রয়েছে, যাদের প্রত্যেকটির সাফল্যের পিছনে সমন্বয়ের
অবদান অপরিসীম। সমন্বয় পরিকল্পনাকে সহায়তা
করে, সংগঠনকে মজবুত করে, নির্দেশনাকে ফলপ্রসূ করে, প্রেষণাকে উন্নত করে এবং নিয়ন্ত্রণকে
উদ্দেশ্যমুখী ও শক্তিশালী করে তোলে।
অর্থাৎ সমন্বয় না থাকলে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে যায়।
৬. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency) : সমন্বয়
কর্মীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। সমন্বয় সাধন হলে কর্মীদের কাজের মান বৃদ্ধি পায়। এর ফলে প্রত্যেকটি
বিভাগ ও উপবিভাগ সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করে।
৭. গতিশীলতা বৃদ্ধি (Increasing dynamism) : সমন্বয়হীন
কাজ কখনই সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। সমন্বয়ের অভাব বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করে, যা কাজের গতিকে
শ্লথ করে দেয়। তাই কার্যক্ষেত্রে সমন্বয় নিশ্চিত করতে পারলে কাজের গতিশীলতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
৮. ব্যয় হ্রান্স (Cost minimize) : সমন্বয়ের ফলে কাজে শৃঙ্খলা আসে। কাজের গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। সকল ক্ষেত্রে সমতা বিধান হয়। মতানৈক্য দূর হয়, সর্বোপরি কর্মীর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যবস্থাপনার ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস করে।
৯. উত্তম কার্য পরিবেশ সৃষ্টি (Creating better
working environment): উত্তম সমন্বয় উত্তম কার্য পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান করে, যা কর্মীদের মাঝে সন্তুষ্টির
সৃষ্টি করে। ফলে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীর আনুগত্য প্রদর্শন করে।
১০. সামগ্রিক উদ্দেশ্যার্জন (Accomplishment of
common objectives) : বিভিন্ন বিভাগ উপরিভাগের মাঝে সমন্বয়ের ফলে সকলেই একযোগে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উদ্দেশ্য
অর্জনের জন্য কাজ করে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজ উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভবপর হয়।
১১. আদর্শ কর্মী সৃষ্টি (Development of ideal
personnel) : সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুশৃঙ্খল পরিবেশ স্থাপন করা সম্ভবপর করে। ফলে
প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি কর্মী স্বতঃস্ফূর্ত সেবা প্রদান করে থাকে। কারণ দক্ষ
কর্মীরা শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে কাজ করতে
পছন্দ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা অনেকাংশে কমে যায়। ফলে আদর্শ কর্মী সৃষ্টি হয়।
১২. সংহতি স্থাপন (Harmony) : বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের
বিভিন্ন বিভাগ এবং উপবিভাগের মাধ্যমে কার্যসম্পাদিত হয়। উক্ত বিভাগগুলোর মধ্যে যদি সংহতি
স্থাপিত না হয় তাহলে সঠিক এবং সফলতার সাথে কার্যসম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই উক্ত বিভাগগুলোর মধ্যে সংহতি স্থাপন শুধুমাত্র
সমন্বয়ের মাধ্যমেই সম্ভবপর হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
১৩. সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি (Create
cordial relationship) : প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ থাকে। এসব পক্ষগুলোর মধ্যে ভিন্ন
ভিন্ন স্বার্থ জড়িত থাকে। প্রতিষ্ঠানের এসব ভিন্নমুখী স্বার্থের বা কার্যের মতানৈক্য
সমন্বয়ের মাধ্যমে দূর করা যায়। ফলে
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের
সৃষ্টি হয়।
১৪. মিতব্যয়িতা অর্জন (Attainment of economy) :
সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগসমূহের
অপব্যয় এবং অপচয় অনেকাংশে কমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠান মিতব্যয়িতার সাথে অধিক
উৎকৃষ্ট মানের পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, এসব ক্ষেত্র ছাড়াও কর্মী এবং ব্যবস্থাপনার
মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস, কাজের পূর্ণ সংহতি
নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে সমন্বয় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ থেকে বলা যায় যে, সমন্বয় ছাড়া সত্যিকার অর্থে কোন
সংগঠন গড়ে উঠতে পারে না। যেখানে অনেকের কর্ম প্রচেষ্টা জড়িত থাকে সেখানেই সমন্বয়ের প্রয়োজন অনুভূত
হয়।
0 মন্তব্যসমূহ