পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

  

পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা ব্যবস্থাপনাকে সমগ্র কার্য পরিচালনা ও বাস্তবায়নের ভিত্তি প্রদান করে। এটি ব্যবস্থাপনাকে অনিশ্চয়তার মধ্যেও নিশ্চয়তার আশ্বাস প্রদান করে আশান্বিত ও কর্মক্ষম করে তোলে। তাই পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার পক্ষে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কার্যব্যবস্থা।

পরিকল্পনার গুরুত্ব

নিম্নে পরিকল্পনার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

১. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন (Accomplishment of organizational objectives)

পরিকল্পনার প্রধান কাজ হল বিশৃঙ্খলা দূর এবং ঝুঁকি হ্রাসপূর্বক সহজতর পন্থায় কারবারের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করা। পূর্ব পরিকল্পনা থাকায় এর আলোকে পলিসি বা পন্থা নির্ধারণ ও কর্মসূচি গ্রহণে পরিকল্পনা প্রণেতাদের সুবিধা হয়। মূলত পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনের একটি অন্যতম সহায়ক ব্যবস্থা।

২. ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্যাবলি বাস্তবায়ন (Implementation of others managerial function)

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সমুদয় কার্যাবলির ভিত্তিস্বরূপ। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায় না। তাই পরিকল্পনা অন্যান্য কার্যাবলি কার্যকর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. কারবারের সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ (Development of business and growth)

এটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারবারের ঝুঁকি হ্রাস ও অনিশ্চয়তা দূর করে কারবারের কার্যকলাপ সম্প্রসারণ এ উন্নয়ন সহজতর করে। এর অভাবে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৪. সঠিক কার্য নির্দেশনা দান (Right guides to action)

পরিকল্পনা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে পরিচালনা করে। এটি প্রতিষ্ঠানের যে খরচগুলো প্রত্যাশা করা হয় না সেগুলো কমায় এবং ফলাফলের উপর সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত কর্মকাণ্ডগুলো সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

৫. নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি (Basis for control)

পরিকল্পনাকে সর্বদাই নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যসমূহ সম্পন্ন করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানের কার্যসমূহ পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হচ্ছে কি না তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরূপণ করা হয়ে থাকে।

৬. সুযোগ সুবিধার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ (To ensure of utilization of facilities)

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। এরূপ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধার ব্যবহার করে থাকে। পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত যাবতীয় সম্পত্তির এবং সুযোগ সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

৭. নির্বাহিদের মর্যাদা বৃদ্ধি (Increase of managers status)

সঠিক পরিকল্পনা নির্বাহিদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। কারণ এরূপ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের সম্পদসমূহকে যথাযথ ব্যবহার এবং কর্মীদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করে থাকেন। এতে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হয়।

৮. যথাযথ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ (To ensure actual production)

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনসমূহ যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই।

৯. সম্পদের সঠিক ব্যবহার (Proper utilization resources)

সম্পদসমূহকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে কোন প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে না। তাই পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের সম্পদসমূহকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জিত হয়।

১০. ভবিষ্যৎ দর্শন (Future visualization)

পৃথিবীতে কোনকিছুর ফলাফলই নিশ্চিতভাবে পূর্ব থেকে বলা সম্ভব হয় না। ফলাফলের সর্বোচ্চ নিকটবর্তিতা নির্ভর করে দূরদৃষ্টির উপর। আর পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যতের ফলাফলেরই প্রাথমিক ধাপ। তাই পরিকল্পনার ভিতর ভবিষ্যতের সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠে, যা সাধারণ মানুষকে ভবিষ্যৎ দর্শনের সুযোগ করে দেয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভবিষ্যতে যে কোন কার্যসম্পাদন করতে পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ দর্শন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১. ব্যয় হ্রাস (Minimization of cost)

 বিভিন্ন প্রকার নীতি প্রণয়ন করে পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হয়। কারণ পরিকল্পনা জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপচয় হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি সর্বোত্তম বিকল্প প্রদান করে বলে অপচয় হ্রাস পায় এবং মিতব্যয়িতা অর্জিত হয়।

১২. দক্ষতা অর্জন (Achieve efficiency)

প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের ধ্যানধারণা ও চিন্তা স্বতন্ত্র হলেও পরিকল্পনা সকলের সাথে ঐকতান বজায় রেখে সার্বিক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রণীত হয়। ফলে পূর্বনির্ধারিত সুস্পষ্ট কার্যক্রমের আওতায় কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন সহজতর হয়।

১৩. সমস্যা সমাধান (Problem solve)

সংগঠনের প্রতিটি স্তরে উদ্ঘাটিত সমস্যা সুচিন্তিত পরিকল্পনার আওতায় নির্ভুলভাবে ও দ্রুততার সাথে সমাধান করা যায়। পরিকল্পনা ছাড়া সমস্যা সমাধান বিলম্বিত হতে পারে বা সমাধান আদৌ সম্ভব নাও হতে পারে।

১৪. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Follow proper course of action)

পরিকল্পনা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করে। এর ফলে ব্যবসায়ের পরিবেশ কাম্য অবস্থায় বিরাজ করে ও একজন ব্যবস্থাপক প্রাসঙ্গিক এবং মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করে মুখ্য উদ্দেশ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে।

উপরিউক্ত আলোচনার চূড়ান্ত পর্বে বলা যায় যে, কারবার ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে পরিকল্পনার গুরুত্ব অত্যধিক এবং অনস্বীকার্য। কেননা পরিকল্পনা ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে না। এক্ষেত্রে কোন উত্তম পরিকল্পনা হতে উপরিউক্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ