ভূমিকম্প একটি ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক
দুর্যোগ। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কারণে ভূত্বকের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে যেসব আকস্মিক ও
অভ্যন্তরীণ কারণে ভূত্বকের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়, ভূমিকম্প সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভূমিকম্প মানবজীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে
আনে।
ভূমিকম্প কি
ভূত্বকের আন্দোলন বা কম্পনের
ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। আকস্মিক বা হঠাৎ ভূপৃষ্ঠ কখনও কখনও কেঁপে ওঠে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠে মৃদু স্পন্দন
অনুভূত হয়। আবার কখনও প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। ভূত্বকে এ কম্পন মাত্র
কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। নানাবিধ প্রাকৃতিক কারণে
ভূঅভ্যন্তরে আলোড়নের ফলে ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনের সৃষ্টি হলে তখন তাকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে।
অর্থাৎ ভূঅভ্যন্তরে যখন সৃষ্ট কোনো স্পন্দন
বা কম্পন ভূত্বককে আন্দোলিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে।
বলা যায়, "An
earthquake is a vibration or
oscillation of the surface of the earth casued by a transient disturbance of
the elastic or gravitational equilibrium
of the rocks at or beneath the surface."
ভূমিকম্প ভূঅভ্যন্তরের যেকোনো
স্থানে সংঘটিত হতে পারে। ভূঅভ্যন্তরের যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে কেন্দ্র বলে এবং কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি উপরে ভূপৃষ্ঠস্থ
বিন্দুকে উপকেন্দ্র বলে। ভূঅভ্যন্তরে বিভিন্ন স্তরের ঘনত্ব ও উপাদান বিভিন্ন হওয়ার কারণে ভূকম্পন রেখা আঁকাবাঁকা হয়। রিক্টার
স্কেলের সাহায্যে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা হয়।
![]() |
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র |
ভূমিকম্প কত প্রকার ও কী কী
ভূমিকম্প একটি হঠাৎ সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূত্বক প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ভূত্বকের এ পরিবর্তন বেশির ভাগ ধীরভাবে হলেও আকস্মিকভাবে কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ভূমিকম্প ভূত্বকের আকস্মিক পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে থাকে। তবে এ কম্পন কোথাও কম আবার কোথাও বেশি। ভূতত্ববিদগণ ভূমিকম্পের উৎপত্তি অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভূমিকম্পকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।
ভূমিকম্পের শ্রেণিবিভাগ
ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার কারণ ও প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে একে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা :
১. প্রাকৃতিক ভূমিকম্প
- আগ্নেয় ভূমিকম্প
- ভূপাঠনিক ভূমিকম্প
- পাতালিক ভূমিকম্প
২. কৃত্রিম ভূমিকম্প
১. প্রাকৃতিক ভূমিকম্প
সাধারণত যে ভূমিকম্প স্বাভাবিক
ও প্রাকৃতিক কারণে উৎপত্তি হয় বা সংঘটিত হয় তাকে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প বলে। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য ভূআন্দোলন ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কোনো স্থান হঠাৎ
উত্থিত হওয়া বা বসে যাওয়া, ভূমি সংকোচন ও প্রসারণ
প্রভৃতির জন্য এ ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক ভূমিকম্পকে ভূতত্ত্ববিদগণ আবার তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা
:
ক. আগ্নেয় ভূমিকম্প : সাধারণ
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয় বলে এ ধরনের ভূমিকম্প। বিস্ফোরক আগ্নেয়গিরি হতে অগ্ন্যুৎপাতকালীন
যখন প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয় তখন তার প্রচন্ড কম্পনের তীব্রতায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চল
হতে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত এ ভূমিকম্প অনুভূত
হয়।
খ. ভূগাঠনিক ভূমিকম্প : এ
ধরনের ভূমিকম্প হঠাৎ ভূআন্দোলনের ফলে উৎপত্তি হয়। ভূপৃষ্ঠ এবং ভূঅভ্যন্তরীণ তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণে চ্যুতির সৃষ্টির
ফলে এ ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ভূপাঠনিক ভূমিকম্পের আন্দোলন ভূপৃষ্ঠ হতে
নিচের দিকে ৫ কিলোমিটার হতে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘটতে
পারে।
গ. পাতালিক ভূমিকম্প : পাতালিক
ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার হতে ৭০০ কিলোমিটার গভীরে সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভে তাপ ও চাপের
তারতম্যের কারণে ভূগর্ভের শিলাসমূহের রাসায়নিক বিস্ফোরণের ফলে শিলাসমূহের আলোড়ন, ভাঙন, হঠাৎ নিচে পতিত হওয়া প্রভৃতি কারণে
এ ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে
পাতালিক ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠে মৃদু ঝাঁকুনির সৃষ্টি করে। ফলে উপকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন
ঘটে।
২. কৃত্রিম ভূমিকম্প
মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিকম্পকে কৃত্রিম ভূমিকম্প বলে। পারমাণবিক বিস্ফোরণসহ ভূগর্ভে খনি ধসে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের খনির অনুসন্ধান কাজে কৃত্রিম ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
বিভিন্ন আকস্মিক ও অভ্যন্তরীণ
কারণে ভূত্বকের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়, সেগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। ভূমিকম্প একটি আকস্মিক কিন্তু
ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
ভূঅভ্যন্তরীণ নানা প্রাকৃতিক কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এটি ভূত্বকের আকস্মিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানবজীবনে বয়ে আনে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়। তাই ভূমিকম্পের ফলাফল ভয়াবহ।
ভূমিকম্পের কারণ
বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত
হয়। নিম্নে ভূমিকম্পের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো।
১. ভূপৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধি
: ভূপৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধির ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠে ক্রমাগত পলি সঞ্চয়ের
কারণে এর কোনো স্থানে চাপ বৃদ্ধি পায়। এতে শিলাস্তরের
অবনমন ঘটে। যার কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
২. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
: বিভিন্ন কারণে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়। আর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময়
এর জ্বালামুখ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে লাভা,
ভস্ম ইত্যাদি ভূপৃষ্ঠে উত্থিত হয়। ফলে পার্শ্ববর্তী স্থানে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
৩. ভূপাত : ভূপাতের কারণে
ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। কোনো কারণে বৃহৎ শিলাখন্ড পাহাড় বা উচ্চস্থান থেকে নিচে ভূপৃষ্ঠের উপর ধসে পড়লে তাকে
ভূপাত বলে। ভূপাতের ফলে ভঙ্গিল বা ভাঁজ পর্বতের নিকট ভূমিকম্প হয়।
যেমন— ১৯১১ সালে পাশীর মালভূমিতে
বিশাল ভূপাত হওয়ার কারণে তুর্কিস্তানে প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়।
৪. ভূআন্দোলন : ভূমিকম্পের
অন্যতম প্রধান কারণ হলো আকস্মিক ভূআন্দোলন। ভূগর্ভ শীতল হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার আয়তন হ্রাস পেতে থাকে। ফলে
একটা আলোড়ন চলতে থাকে। এতে ভূত্বকের অনেক স্থানে ভাঁজ পড়ে কোথাও বা অবনমিত হয়, আবার কোথাও নিম্নের শিলাস্তর খণ্ডবিখণ্ড
হয়ে ভূগর্ভে বসে যায়। এরূপ অবস্থায় ভূমির সমতা
রক্ষার্থে ভূমিকম্প হয়।
৫. শিলাচ্যুতি : পৃথিবীর
অভ্যন্তরে শিলাচ্যুতি ঘটলে কিংবা শিলাতে কোনো কারণে ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। এক্ষেত্রে শিলাতে চ্যুতি ঘটার ফলে
ভূত্বকের কোনো অংশ উপরে উত্থিত হয় অথবা নিচে বসে যায়। এতে চ্যুতিতলে প্রবল ঘর্ষণের দরুণ ভূমিকম্প হয়।
যেমন— ১৯৩৪ সালে ভারতের বিহারে
এবং এবং ১৯৫০ সালে আসামে এ ধরনের ভূমিকম্প হয়।
৬. ভূগর্ভস্থ বাষ্প : কোনো
কারণে ভূঅভ্যন্তরে বাষ্পের চাপ অধিক হলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগে প্রবল বেগে ধাক্কা দেয়, ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূঅভ্যন্তরের
এ বাষ্প ভূপৃষ্ঠের কোনো দুর্বল বা ফাটল স্থান দিয়ে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত
কম্পন অব্যাহত থাকে।
৭. ভূগর্ভে তাপ বিকিরণ :
ভূগর্ভ তাপ বিকিরণের ফলে ক্রমশ সংকুচিত হয়। এতে ভাঁজ ও ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং ভূমিকম্প ঘটে।
৮. খনির ভাঙন : খনির ভাঙনের
ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। খনি অঞ্চলে খনন কার্যের ফলে যে খালি জায়গার সৃষ্টি হয়, সেখানে দুর্ঘটনাবশত কখনও কখনও ভূমিধসের
ঘটনা ঘটে, ফলে নিকটবর্তী স্থানে ভূমিকম্প হয়।
৯. শিলান্তরের ভারসাম্য
: ভূপৃষ্ঠের কোনো কোনো স্থানের শিলান্তরের চাপ বৃদ্ধি পেলে তা নিচে অবনমিত হয়। ফলে ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পার্শ্ববর্তী
শিলাস্তর উপরে উত্থিত হয় এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।
১০. ভূগর্ভস্থ চাপের হ্রাস
: ভূগর্ভস্থ চাপের হ্রাস পেলেও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। কোনো কারণে ভূগর্ভের কোনো স্থানে চাপের হ্রাস পেলে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ
কঠিন পদার্থসমূহ তরল অবস্থায় পরিণত হয়। ফলে উপরিভাগের শিলাস্তর নিচের দিকে নামতে থাকে এবং ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রবল ঝাঁকুনি তথা
ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
১১. ভূগর্ভে পানি প্রবেশ
: বিভিন্ন ফাটল বা সরু ছিদ্রপথে ভূপৃষ্ঠস্থ পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করলে এর উত্তাপের প্রভাবে প্রচুর বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এ বাষ্পের
পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিচে ঊর্ধ্বমুখী চাপ প্রয়োগ করে এবং
ভূমিকম্প হয়।
১২. ভূগর্ভস্থ গুহার ভাঙন
: ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন স্থানে চুনা পাথুরিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন আকৃতির ছোট বড় অনেক গুহা
থাকে। বড় আকৃতির এসব
গুহার ছাদ দুর্বল হয়ে ধসে পড়লে ভূমি সজোরে কেঁপে ওঠে। এতে পার্শ্ববর্তী স্থানে ভূমিকম্প
অনুভূত হয়।
১৩. হিমবাহের প্রভাব : শীতপ্রধান
দেশে অবস্থিত কোনো উচ্চ পর্বতগাত মাঝে মাঝে বৃহৎ আকৃতির তুষারখণ্ড পিছলে হঠাৎ নিচে পতিত হলে পার্শ্ববর্তী স্থানে
ভূমিকম্প হয়।
১৪. বিস্ফোরণের প্রভাব : উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণাবিক বোমা বিস্ফোরণ, ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষানিরীক্ষা প্রভৃতি পরীক্ষামূলক কাজে বিস্ফোরণের প্রভাবে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পের ফলাফল/ প্রভাব
ভূমিকম্পের ফলাফল/ প্রভাব
নিম্নে ভূমিকম্পের ফলাফল প্রভাব আলোচনা করা হলো।
১. সমুদ্রতলের পরিবর্তন:
ভূমিকম্পের ফলে কখনও কখনও সমুদ্রতলের কোনো স্থান উত্থিত হয়ে শুদ্ধ স্থলভাগ গঠন
করে। আবার কখনও কখনও উপকূল ভাগ সমুদ্র তলে নিমজ্জিত হয়। এতে সমুদ্র তলের পরিবর্তন ঘটে।
২. ভূত্বকে ফাটল ও চ্যুতির
সৃষ্টি : ভূমিকম্পের ফলে তৃত্বকে ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ফাটল ও চ্যুতির ফলে ফাটল দিয়ে কাদা, বালি, উষ্ণ
পানি প্রভৃতি নির্গত হয়। আবার চ্যুতি সৃষ্টির ফলে
তার মধ্যবর্তী ভূভাগ ধসে গিয়ে সৃষ্ট
উপত্যকা এবং উত্থিত স্থানে স্তূপ পর্বতের
সৃষ্টি হয়।
৩. নদনদীর গতি পরিবর্তন:
প্রবল ভূমিকম্পের ফলে কখনও কখনও নদীর গতিপথের পরিবর্তন ঘটে। নদীতে প্রচুর কর্নম, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হলে তা শুকিয়ে
যায়। ফলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়।
যেমন- ১৯৫০ সালে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে আসামের দিরাং নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়।
৪. শিলায় তাঁজের সৃষ্টি : ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্পের প্রবল
ঝাঁকুনিতে অনুভূমিক পার্শ্বচাপের প্রভাব পড়ে। ফলে তা ঝুঁকড়ে গিয়ে
ভাঁজের সৃষ্টি হয়।
৫. বন্যার সৃষ্টি : ভূমিকম্পের
সময় সমুদ্রের পানিরাশি ভীষণ গর্জনের সাথে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলকে গ্লাবিত করে বন্যার সৃষ্টি
করে।
৬. ভূমির উত্থানপতন : ভূমিকম্পের
ফলে কখনও কখনও উঁচু ভূমি সমুদ্রের তলদেশে নিমজ্জিত হয়। অথবা সমভূমি অঞ্চল নিমজ্জিত হয়ে হ্রদের সৃষ্টি করে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্র তলদেশের কোনো কোনো স্থান উঁচু হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি করে।
৭. হিমানি সম্প্রপাত : ভূমিকম্পের
ফলে পর্বতগাত্র হতে বৃহৎ আকৃতির বরফের খণ্ড নিচে পতিত হয়ে হিমানি সম্প্রপাতের সৃষ্টি হয়।
৮. ভূপাত : ভূমিকম্প বৃহৎ
আকৃতির শিলাখন্ডকে নাড়িয়ে ফেলে। এর ফলে উচ্চ পর্বতগাত্র হতে বৃহৎ আকৃতির শিলাখন্ড নিচে পতিত হয়ে তৃপাতের সৃষ্টি হয়।
এতে পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৯. ধ্বংসলীলা : ভূমিকম্পের
ফলে বিভিন্ন সম্পদ ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু, রেলপথ প্রভৃতি ধসে পড়ে। ভূমিকম্পের
ফলে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার কিলোমিটার ভূখণ্ড গ্লাবিত হয়।
এতে লক্ষ লক্ষ প্রাণী মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
যেমন- ১৯৯১ সালে রাশিয়ায়,
১৯৯৩ সালে ভারতের বোম্বাইতে, ১৯৯৭ সালে ইরানে, ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানে, ১৯৯৯ সালে তুরস্ক
ও তাইওয়ানে, ২০০১ সালে ভারতের গুজরাটে,
২০০৪ ও ২০০৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। তাতে বহু সম্পদের
ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ব্যাপক প্রাণহানি
ঘটে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে
বলা যায় যে, নানাবিধ কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প একটি ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি হঠাৎ করে উৎপত্তি লাভ
করে পৃথিবীর জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনে। মুহূর্তের মধ্যে ভূপৃষ্ঠের ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি
ঘটে। এর প্রচণ্ডতা ও ভয়াবহতা মানুষকে আতঙ্কিত করে।
0 মন্তব্যসমূহ