ভূগোল কি
পৃথিবীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানার উৎস হলো ভূগোল। ভূগোলের পরিধি শুধুমাত্র এ বিশ্বে নয়; বরং মহাবিশ্ব পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। কেননা ভূগোল একটি গতিশীল বিজ্ঞান। বিশ্বে প্রতিনিয়ত যা ঘটেছে, তাঁর সবই ভূগোলের সাথে সম্পৃক্ত। ভূগোল পৃথিবী ও তার পৃষ্ঠদেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। ভূগোল এমন একটি জ্ঞানের উৎস যার মাধ্যমে পৃথিবীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে ভূগোল।
ভূগোল শব্দের উৎপত্তি
ভূগোল শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক পণ্ডিত ইরাটোসথেনিক। 'Geography' এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো ভূগোল। দুটি গ্রিক শব্দ 'Geo' (জিও) অর্থ ভূমণ্ডল বা পৃথিবী এবং 'Graphy' (গ্রাফি) অর্থ বর্ণনা। সার্বিক অর্থে মানুষের আবাস এ পৃথিবীর বর্ণনা।
ভূগোল কাকে বলে
যে শাস্ত্র পাঠের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অবস্থা (জলভাগ, স্থলভাগ, বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক অবস্থা) তার অধিবাসী সম্পর্কে এবং পৃথিবীর বহিবিশ্ব অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে তাকে ভূগোল বলে।
ভূগোল এর সংজ্ঞা
হার্টশোনের মতে, "Geography is concerned to prove accurate orderly and rational description and interpretations of the variable character of the earth's surface." অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যাবলির সঠিক, শ্রেণিবদ্ধ এবং যুক্তিসংগত বর্ণনা ও বিশ্লেষণ ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।অধ্যাপক রেনারের মতে, "Geography is the science which deals with
earth and the men living on the earth and is therefore the most basic fundamental of all branches of
learning." অর্থাৎ, ভূগোল হচ্ছে এরূপ একটি বিজ্ঞান যা পৃথিবী ও তার ওপর বসবাসরত মানুষকে নিয়ে আলোচনা করে এবং এটি জ্ঞানের সব শাখার মধ্যে অত্যন্ত মৌলিক ও প্রাথমিক শাখা।
ভূগোলের আধুনিক সংজ্ঞায় বলা যায়, “ভূগোল একটি গতিশীল বিজ্ঞান যা মানুষ, পৃথিবী ও পরিবেশের বর্ণনা প্রদান করে; এদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণপূর্বক একের ওপর অন্যের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে এবং এটি হচ্ছে জ্ঞানের সব শাখার মধ্যে অত্যন্ত মৌলিক ও প্রাথমিক শাখা।"
ভূগোল জ্ঞানের শুরু
ভূগোল জ্ঞানের ইতিহাস শত শত বছর আগের ইতিহাস। ধারণা করা হয় যে, মানব সভ্যতার আদিকাল থেকেই বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্পদের জন্য স্থানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। গ্রিক যুগের দার্শনিকরা পৃথিবী সম্পর্কিত তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। তাদের জ্ঞান চর্চার সুবিধার জন্য এসব তথ্যাবলিকে দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত করেন । যথা :
১. ভূগোল (পৃথিবীর ভূভাগ সম্পর্কিত জ্ঞান চর্চা)
২. মহাজাগতিক বিদ্যা (মহাকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি)।
গ্রিক পণ্ডিত ইরাটোসথেনিস (Eratosthenes) বলেন, ভূগোল ছিল পৃথিবীর সঠিক বর্ণনা। গ্রিক দার্শনিকগণ পৃথিবী সম্পর্কিত তথ্যাবলি ছাড়াও স্থানসমূহের তারতম্য এবং এর কারণ অনুসন্ধান করেন। যেমন, পৃথিবীর জলবায়ু সম্পর্কে জানার জন্য তারা পৃথিবীকে অঞ্চলগত শ্রেণিবিভাগ করেন যা অনেকটা আধুনিক আক্ষাংশভিত্তিক জলবায়ু অঞ্চলের অনুরূপ। তবে ভূগোল জ্ঞান চর্চা গ্রিকদের তৈরিকৃত মানচিত্র সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। ভূগোলবিষয়ক জ্ঞান চর্চা মধ্যযুগে কিছুটা হ্রাস পায়। বিশেষত ইউরোপে বিশ্ব পরিভ্রমণ যুগে (১৫০০-১৯০০) নতুন নতুন দেশ আবিষ্কারের ফলে ভৌগোলিক জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এ সময়কার বিজ্ঞানীরা ভৌগোলিক তথ্যাবলিকে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক কাঠামোর আওতায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানী 'বাইন হার্ডাস ভেরিনিয়াস' এর মধ্যে অন্যতম। তিনি ভৌগোলিক তথ্যাবলিকে প্রাকৃতিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এ দুই অংশে বিভক্ত করেন। তিনি মানুষের সাথে বাহ্যিক পৃথিবীর আন্তঃসম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। ভেরিনিয়াস ভূগোল বিষয়কে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয় হিসেবে গুরুত্বারোপ করলেও ইমানুয়েল কান্ট ভূগোলকে 'বিজ্ঞানে' স্থান করে নিতে বিশেষভাবে অবদান রাখেন।
0 মন্তব্যসমূহ