ব্যবস্থাপনা একটি পেশা
ব্যবস্থাপনা পেশা কি না এ বিতর্ক আজ সময়ের দাবি হলেও ইতোমধ্যে ব্যবস্থাপনা সন্মানিত পেশার স্থানে লোকসমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। তথাপি এ বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় পেশা হিসেবে ব্যবস্থাপনাকে ডাইনসিদ্ধ স্বীকৃতি দানের ক্ষেত্রে। তাই এ সম্পর্কে ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থান উল্লেখপূর্বক নিম্নে প্রয়োজনীয় বর্ণনা প্রদান করা হল।পেশা হিসেবে ব্যবস্থাপনা
পেশা হল কোন বিশেষ বিদ্যায় দক্ষতা
অর্জনের পর উক্ত দক্ষতা ও শিক্ষাকে বাস্তবজীবনে কাজে লাগিয়ে জীবিকা
নির্বাহের প্রচেষ্টা। ডাক্তারি, আইন ব্যবসা, প্রকৌশলী, নার্স প্রভৃতি
বিদ্যা সমাজে স্বীকৃত পেশা হিসেবে পরিচিত।
পেশার সংজ্ঞার দিতে গিয়ে A. E. Benn বলেছেন, “পেশা হল
বিশেষ জ্ঞান আহরণের এমন একটি কৌশল যেখানে অন্যকে পথ প্রদর্শন, নির্দেশনা ও উপদেশ প্রদান করা হয়।" (Profession is a calling in which on profession to have acquires specialized
knowledge which is used either in instructing guiding on advising others.)
K. N. Andrews নামক একজন বিখ্যাত গবেষক তাঁর গবেষণায় পেশাকে কতিপয় বৈশিষ্ট্যের অধীনে চিহ্নিত
করেছেন।
এগুলো হচ্ছে বিশেষ জ্ঞানের চর্চা, অর্জিত জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ, সামাজিক দায়িত্বশীলতা, আত্মমর্যাদা
এবং সামাজিক স্বীকৃতি। উপরিউক্ত সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনাকে পেশা হিসেবে বিবেচনা
করা গেলেও পূর্ণাঙ্গ পেশার ক্ষেত্রে বর্তমানকালের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি একান্ত জরুরি বলে গণ্য করা হচ্ছে। এসকল বৈশিষ্ট্য
নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১. পেশার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা পেতে
হলে বর্তমানকালে এক ব্যক্তিকে কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হতে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এক্ষেত্রে পেশার
স্বীকৃতিতে ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সফল। কেননা বর্তমানে বহু স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা
বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সারা বিশ্বে
বিবিএ, এমবিএ কোর্স আজ যথেষ্ট জনপ্রিয়তা
অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্বল্পকালীন ডিপ্লোমা ডিগ্রিরও আয়োজন করছে।
২. পেশার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা, কৌশল এবং দক্ষতায় পারদর্শী হতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকদের
এখনও পর্যন্ত স্বতন্ত্র
বিধিমালা প্রণীত হয় নি।
৩. প্রতিষ্ঠান হতে অর্জিত জ্ঞানকে
কাজে লাগানোর যথেষ্ট ক্ষেত্র থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানকে কাজে লাগানোর যথেষ্ট
সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৪. প্রতিটি পেশারই একটি স্বতন্ত্র
প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা বা সমিতি থাকা জরুরি, যেখানে
পেশাদাররা সদস্যপদ গ্রহণ করবে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সেরকম কোন আন্তর্জাতিক
প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় নি।
৫. প্রতিটি পেশার সদস্য
বা পেশাদারগণের জন্য নির্দিষ্ট নৈতিক আচরণবিধি প্রণয়ন করা এবং তা মেনে চলাও জরুরি।
৬. প্রতিটি সদস্যকে নির্ধারিত সংস্থা হতে সনদ গ্রহণ এবং কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক বা ফিসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যোগ্যতাসূচক সনদের ব্যবস্থা হয় নি।
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়
যে, ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ শুরুত্বের জন্যই ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণাঙ্গ পেশার মর্যাদা
দান করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। শিল্পায়নের ব্যাপক প্রসারে ব্যবস্থাপনার উপর সেরূপ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে না বলে মনে
হয়। এমতাবস্থায় বলা যায় অচিরেই ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গ পেশার মর্যাদা লাভে সক্ষম হয়ে উঠবে।
0 মন্তব্যসমূহ