আব্বাসীয় খলিফাদের
মধ্যে আল মাহদীর রাজত্বকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খলিফা আল মাহদী পিতা আল মনসুর কর্তৃক কঠোর ও রক্তপাত নীতি
পরিত্যাগ করে উদার ও শান্তিপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেন। তিনি প্রজা বৎসল ও মহানুভব খলিফা
হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার দশ বছরের রাজত্বকাল
আব্বাসীয় খিলাফতের গৌরবময় অধ্যায় ছিল।
খলিফা আল মাহদীর পরিচয়
আল মাহদী সম্ভবত
৭৪৩-৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে খুজিস্তানের ইজাজ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ।
তার পিতার নাম আবু জাফর আল মনসুর এবং মাতার নাম উম্মে সালমা। মাতার দিক দিয়ে
তিনি ইয়েমেনের প্রাচীন হিময়ার রাজবংশোদ্ভূত ছিলেন।
৭৫৮-৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খোরাসানের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং রায় গমন
করে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে স্বল্পকালের
জন্য ইরাক গমন করেন। তিনি সেখানে জ্ঞাতি ভগ্নি প্রথম আব্বাসীয় খলিফা আস-সাফ্ফাহর কন্যা রায়তাকে বিবাহ করেন। তিনি ৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত খোরাসানে অবস্থান করেন। রায় নগরীতে তার নিজস্ব দরবার ছিল। তার অবস্থানকালে এই রায় নগরীতে একটি নতুন
প্রশাসনিক মহল্লা সংযুক্ত করা হয়।
সিংহাসনে আরোহণ
পিতা আবু জাফর
আল মনসুরের মৃত্যুর পর ৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ 'আল মাহদী' উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
আলীপন্থিদের সাথে সদ্ব্যবহার
খলিফা আল মাহদী
আলীপন্থিদের সাথে সদ্ব্যবহার করেন। খলিফা আল মাহদী আলী পরিবারের সদস্যবর্গকে তার দরবারে আমন্ত্রণ
করেন এবং তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও খলিফা আল মাহদী আলীপন্থিদের সন্তুষ্ট করার জন্য একটি আনসার বাহিনী গঠন করেন
এবং তাদের জন্য বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন প্রেরণ করেন। ফলে আল মাহদীর রাজত্বকালে আলীপস্থিদের গোলযোগ দেখা যায়নি।
বিদ্রোহ দমন
খলিফা আল মাহদীর
শাসনামলে খোরাসানে মোকান্না (প্রকৃত নাম হাশিম ইবনে হাকিম) নামে এক লম্পট ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবি করে। সে তার অনুচরদের
মাঝে বিভ্রান্তমূলক মতবাদ প্রচার করে। মোকান্নার শিষ্যগণ সাদা পোশাক
পরিধান করত এজন্য তাদের মুবাইয়ীদ বা সাদা পোশাক পরিহিত
বলা হতো। খলিফা অতি সহজেই মোকান্নাকে পরাজিত ও হত্যা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে মোকান্নার অনুসারীদের মধ্যে থেকে
কাস্পিয়ান সাগরের পূর্ব দিকে জুরজান নামক স্থানে মুহাম্মির (লাল বস্ত্র
পরিহিত) নামে জিন্দিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। তারা
মজদকের নাস্তিকতা, মনীর দর্শনের সাথে মিশ্রিত করে সমাজের বন্ধনকে শিথিল ও শাসন কর্তৃত্বকে দুর্বল করে তোলে। খোরাসান, ইরাক
এবং পশ্চিম ইরানে এর অনুপ্রবেশ ঘটে। খলিফা তাদেরকে কঠোরতার সাথে দমন করেন। তাদের যাবতীয় মতবাদ বেআইনি এবং সম্পদ
বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
জনহিতকর কার্যাবলি
খলিফা আল মাহদী
তার দশ বছরের রাজত্বকালে বহুবিধ জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যোগাযোগ ও ডাক
বিভাগের উন্নয়ন। তিনি বহু স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদের সম্প্রসারণ ও নতুন প্রতিষ্ঠান
স্থাপন করেন।
আল মাহদীর শেষ নিঃশ্বাস
খলিফা আল মাহদী
৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট জুরজানের মাসান্দান নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।
পরিশেষে বলা
যায় যে, খলিফা আল মাহদী একজন উদার, দানশীল, দূরদর্শী শাসক ছিলেন। তিনি সকল বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যে শান্তি
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার দশ বছরের শাসনামলে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
মূলত তার শাসনামলের পর থেকে আব্বাসীয়দের
গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয়।
0 মন্তব্যসমূহ