সমন্বয়ের নীতিসমূহ উল্লেখ কর

 

সমন্বয়ের নীতিসমূহ উল্লেখ কর

ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম কার্য হল সমন্বয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ এবং কর্মীবৃন্দের কার্যের মধ্যে ভারসাম্য, সংহতি এবং ঐক্য স্থাপনের মাধ্যমে সমুদয় কার্যের পূর্ণতাদানে সহায়তা করে। এ কাজের সফলতা অর্জনের জন্য কতিপয় নীতি অনুসরণ করতে হয়। ব্যবস্থাপনা বিশারদগণ এসব নীতিমালা গ্রহণের সপক্ষে পরামর্শ প্রদান করে। কেননা এসব নীতিসমূহ সমন্বয়ের সহজ অনুশীলন ও কৃতকার্যতা সম্ভব করে। নিম্নে সমন্বয়ের প্রধান প্রদান নীতিসমূহ আলোচনা করা হল।

সমন্বয়ের নীতিমালা

১. শুরুতেই সমস্বর নীতি (Principles of initial co-ordination)

এর অর্থ এই যে, উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যারম্ভের শুরুতেই সমন্বয় নিশ্চিত করতে না পারলে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় বিভিন্ন বিভাগ, উপ-বিভাগ বা শাখার মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সুতরাং উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন বা এদের বাস্তবায়নের পূর্বে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও প্রচেষ্টার সমন্বয় বিধান করতে হবে।

২. ধারাবাহিকতার নীতি (Principles of continuity)

সমন্বয় একটি ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের যে কোন বিভাগ, উপ-বিভাগ, শাখা বা কর্মীর মধ্যে যে কোন সময়ই তা বিরাজমান থাকবে।

৩. নমনীয়তার নীতি (Principles of flexibility)

পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক জগতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সংযোজন ও সংশোধনের প্রয়োজন হয়। সমস্বয়ের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। অন্যভাবে বলা যায় যে, পরিবর্তনের যাথে তাল মিলানোর প্রয়োজনে সমন্বয়ের নমনীয়তা একটি অপরিহার্য গুণ। অবশ্য সমন্বয়ের নমনীয়তা রক্ষার্থে প্রতিনিয়তই তথ্যাদির আদানপ্রদান ও বিনিময় আবশ্যক।

৪. উপাদানসমূহের পারস্পরিক সংযোগ নীতি (Principles of co-ordination among elements)

প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত প্রতিটি উপাদানই সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্জনে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে। এদেরকে তাই পৃথক পৃথকভাবে কল্পনা না করে বরং সামগ্রিকভাবেই বিবেচনা করা হয়। বস্তুত প্রতিটি উপাদানের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ও সমঝোতাই সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্জনে অপরিহার্য।

৫. আদেশের ঐক্য নীতি (Principles of unity of command)

সমন্বয়ের নীতিসমূহের মধ্যে আদেশের ঐক্য নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আদেশের ঐক্য নীতি ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে আদেশদানের ক্ষেত্রে যদি সমন্বিত ধারা বজায় রাখা যায়, তবে সেক্ষেত্রেও সমন্বয় অনেক সহজতর হয়ে থাকে।

৬. প্রত্যঙ্গ সংযোগ নীতি (Principles of direct contract)

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ, উপ-বিভাগ বা শাখার কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রত্যক্ষ সংযোগ সমন্বয়ের কাজকে ত্বরান্বিত করে। কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সরাসরি আলাপ আলোচনা ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে যতটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তা কিছুতেই অন্য কোন উপায়ে সম্ভব নয়।

৭. দল হিসেবে কাজ সম্পাদন (Working as a group principle)

সমন্বয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে কাজগুলো এরূপভাবে বণ্টন ও বিন্যাস করে। যে প্রতিটি কর্মীর কাজ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় ও নির্দিষ্ট পথে চলে এবং কার্যত মনে হয় যে, সমগ্র কাজটি একজনের দ্বারাই সম্পাদিত হয়ে চলছে। এ যেন অনেকটা আর্কস্ট্রীয় বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের শব্দের একটি মধুর ঐক্যতান সৃষ্টি করার মত। সংগঠনের এ দলগত মনোভাব যত ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সমন্বয় কাজ তত সহজ হবে।

৮. উদ্দেশ্যের ঐক্যের নীতি (Principles of unity of objectives)

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। আর সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিভিন্ন বিভাগ উপবিভাগের সৃষ্টি হয়, যার দরুন সমন্বয়ের নীতির প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই উদ্দেশ্যের মাঝে ঐক্যের নীতি সমন্বয় নীতিসমূহের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।

৯. অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের নীতি (Principles of informal relationship)

অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের বাইরেও কর্মী ও ব্যবস্থাপনার মাঝে যে সামাজিক সম্পর্ক বিদ্যমান তাই অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক। সমন্বয়কে ফলপ্রসূ করতে চাইলে অনানুষ্ঠানিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের ব্যর্থতা অনেক ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের মাধ্যমে কাটিয়ে তোলা সম্ভব।

১০. ভারসাম্যের নীতি (Principles of balancing)

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কার্যসমূহকে সমানভাবে এগিয়ে নিতে হলে কার্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অতীব জরুরি। কেননা কার্যের মধ্যে যদি ভারসাম্য বজায় না থাকে তাহলে সমন্বয় সাধন সম্ভব হবে না। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হয়।

১১. ব্যাপকতার নীতি (Principles of pensiveness)

প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের কোন একক ক্ষেত্রের উপর গুরুত্ব না দিয়ে সামগ্রিক ক্ষেত্রেই সমন্বয় ব্যবস্থা জোরদার করে থাকে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগের কার্যসমূহকে সমন্বয়ের আওতায় আনতে হবে।

উপসংহার

উপরে উল্লিখিত নীতিসমূহের পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, সমন্বিত দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সহজে তার কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম। তাই সার্থক ব্যবস্থাপনায় এবং ফলপ্রসূ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত নীতিসমূহের অনুসরণ করার বিকল্প নেই। কেননা এর মাধ্যমে সমন্বয় কর্মসূচি গ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কার্যবলির মধ্যে ভারসাম্য, সংহতি এবং ঐক্যতা বিরাজ করবে এবং দক্ষতার সাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ