কার্বন চক্র কাকে বলে
জীব ও জড়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এদের মধ্যে কয়েকটি চক্র ক্রিয়াশীল। বিভিন্ন চক্রের মধ্যে কার্বন চক্র অন্যতম। কার্বন চক্রের দ্বারা প্রকৃতি ও জীবের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মূলত বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিশাল বিনিময় অবিরত। আর ভৌত ও জীব পরিবেশের এরূপ বিনিময়কে কার্বন চক্র বলে।কার্বন চক্রের গুরুত্ব
প্রকৃতিতে বিভিন্ন চক্রের মধ্যে কার্বন চক্র অন্যতম। বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) বিনিময় অবিরতভাবে হচ্ছে বড় ও জীব পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) এরূপ চলমান প্রক্রিয়াকে কার্বন চক্র বলে। কার্বন চক্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে দেওয়া হল।
- এটি জীব ও জড়বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
- মূলত জীবের শ্বসন ও খনিজ বস্তুর দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশের কার্বন-ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাসের ভান্ডার গড়ে ওঠে।
- সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস গৃহীত হয়ে প্রকৃতির কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস তথ্য কার্বনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
কার্বন চক্র কি
বায়ুমণ্ডলের
এ কার্বন ডাইঅক্সাইড দুটি প্রক্রিয়ায় বিনিময় করে থাকে। যার প্রথমটি হলো স্থল ও সামুদ্রিক উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া
এবং অন্যটি হলো সামুদ্রিক পানি দ্বারা আত্মভূতকরণ বা বিশেষণের মাধ্যমে। নিম্নে
কার্বন চক্র আলোচনা করা হলো।
বৈশ্বিক পরিবেশের
সব জৈব পদার্থের অন্যতম মৌলিক উপাদান হলো কার্বন। বায়ুমণ্ডলে কার্বন বিশেষত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস
রূপে পাওয়া যায়। উৎসগত দিক থেকে বায়ুমণ্ডল মূল হলেও এটি বিভিন্ন উৎস থেকে আসে।
ভৌত পরিবেশের কার্বন ডাইঅক্সাইড রূপে উদ্ভিদ কর্তৃক
সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তী পর্যায়ে খাদ্যশিকলের মাধ্যমে প্রাণিদেহে প্রবেশ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ হতে কার্বন বিশেষ প্রক্রিয়ায়
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) রূপে ভৌত পরিবেশে ফিরে যায় এবং ভৌত পরিবেশ থেকে আবার জীবদেহে প্রবেশ করে। সুতরাং ভৌত
পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে ভৌত পরিবেশে
কার্বন ডাইঅক্সাইডের চক্রাকার পথে আবর্তিত হওয়াকে কার্বন চক্র (Carbon cycle) বলে।
কার্বন ডাইআক্সাইডের এরূপ চক্রাকার সঞ্চালনের
দ্বারা ভৌত পরিবেশের সাথে জীবের সুষম আন্তঃক্রিয়ায় পরিবেশে নির্দিষ্ট মাত্রায়
কার্বনের ভারসাম্য বজায় থাকে। পরিবেশে পাললিক ও গ্যাসীয় উভয় চক্রের মাধ্যমে কার্বন অবিরত
চলাচল করে। গ্যাসীয় চক্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) মুক্ত গ্যাস হিসেবে বায়ুমণ্ডলে চলাচল করে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন
ডাইঅক্সাইড (CO2) এর পরিমাণ ০.০৩৩ শতাংশ। বায়ুমণ্ডল অপেক্ষা পানিতে অনেক বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড
(CO2) দ্রবীভূত থাকে। বিশেষ করে সমুদ্রের পানিতে প্রায় ১.৫% কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) দ্রবীভূত
থাকে। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল ও জলাশয়গুলো পৃথিবীর কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) প্রধান সংরক্ষণাগার।
কার্বন চক্রের চিত্র |
নিম্নের প্রক্রিয়াগুলোর
মাধ্যমে কার্বন চক্র সম্পন্ন হয়।
১. প্রাণী ও
উদ্ভিদ উভয়ের দেহে শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)
উৎপন্ন হয়; পরবর্তীতে তা আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়।
২. কিছু কিছু
সামুদ্রিক মাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্রহণ করে তা কার্বনেটে পরিবর্তিত
করে। এ কার্বনেট দেহ গঠনের কাজে ব্যবহৃত হয়। জলজ প্রাণী, যেমন— শামুক, ঝিনুক প্রভৃতির
খোলক কার্বনেট দ্বারা গঠিত। এগুলো দহনের ফলে বা
মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস
উৎপন্ন হয় এবং তা পরবর্তীতে পানিতে মিশে যায়।
এতে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) এর ঘাটতি পূরণ হয় এবং তা স্বাভাবিক থাকে।
৩. জলজ উদ্ভিদ
পানিতে মিশে থাকা এবং স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল হতে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)
গ্রহণ করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভৌত পরিবেশ হতে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)
উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক শৈবাল কর্তৃক গৃহীত হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে সৌরশক্তির মাধ্যমে জীব বা উদ্ভিদ খাদ্যের অণু গ্লুকোজে (C6H12O6)
পরিণত হয়। কার্বনডাইঅক্সাইড (CO2)
খাদ্যে রূপান্তরের এ প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষণ বলে। আবার প্রাণীরা উদ্ভিদের তৈরি
খাদ্যকে গ্রহণ করে কার্বন সংগ্রহ করে।
(কার্বন ডাইঅক্সাইড + পানি + সৌরশক্তি = গ্লুকোজ + অক্সিজেন + পানি)
৪. মৃত্তিকায়
অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার অণুজীব, যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি প্রাণীর মৃতদেহকে
পচন ঘটিয়ে পচনশীল জৈব শ্বসন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস উৎপন্ন
করে; পরবর্তীতে তা আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়।
৫. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে উৎপন্ন গ্যাস উদগীরণের সময় এবং উষ্ণ প্রস্রবণ হতে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।
0 মন্তব্যসমূহ