অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে কী বুঝ
উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা দ্বারা একটি দেশের আর্থসামাজিক উপাদান যেমন- অবকাঠামো, জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, উৎপাদন ক্ষমতা, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির সম্মিলিত অবস্থার ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। কোনো দেশ বা জাতির উন্নয়ন সেদেশের সামাজিক মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির ইতিবাচক পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। একটি দেশের সামগ্রিক চিত্র ঐদেশের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি
কোনো দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতের একযোগে উন্নতির অগ্রগতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। বলা যায় যে, একটি দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামো, জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, উৎপাদন ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মানের ক্রমোন্নতির এক দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া হলো উন্নয়ন। অর্থাৎ উন্নয়ন হলো একটি দীর্ঘকালীন চলমান প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোগত অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকে। তবে অর্থনীতিতে উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝায়। তাই বলা যায়, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্পপণ্য, খনিজ দ্রব্য, সাংস্কৃতিক অবস্থা, কুসংস্কারমুক্ত সামাজিক অবস্থা প্রভৃতি ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটলে তাকে উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। তাই বলা যায়, কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নই হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবল একটি দেশের দেশজ আয় বা জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় না, বরং এর সাথে দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোরও মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এর ফলে মানব উন্নয়ন ঘটে এবং শ্রমিকের কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় । বর্তমানে ‘উন্নয়ন’ ও ‘প্রবৃদ্ধি’ শব্দ দুটিকে প্রায় একই অর্থে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। একটি দেশের অধিক উৎপাদন এবং একই সাথে কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন ও বণ্টনের পরিবর্তনকে উন্নয়ন হিসেবে অভিহিত করা যায়। তবে প্রবৃদ্ধি বলতে অধিক উৎপাদনকে বা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকে নির্দেশ করা হয় । তাই কোনো দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কি না তা বুঝাতে হলে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মনে রাখা দরকার,
- ১. সেদেশের মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে হবে।
- ২. সেদেশের জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয়ের বার্ষিক বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হতে হবে।
- ৩. সেদেশের অর্থনীতি স্বধারায় পুষ্ট হতে হবে।
তাই উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধিকে বুঝায় না।
কেননা উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে অর্থনীতি বা কোনো খাতের সম্প্রসারণের ফলে প্রবৃদ্ধির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এ সম্প্রসারণ
অন্যান্য খাতে প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারলে অথবা এর সুফল জনগণের কাছে না পৌঁছলে প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও উন্নয়ন
হবে না। অর্থাৎ উন্নয়ন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করে । কিন্তু প্রবৃদ্ধি আবশ্যিকভাবে উন্নয়ন নির্দেশ করে
না। অর্থাৎ কোনো দেশে উন্নয়ন সংঘটিত হলে প্রবৃদ্ধি হতে পারে, আবার উন্নয়ন না হলেও সেদেশে প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া।
কোনো দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকার সমস্যার সমাধান, আর্থসামাজিক অবকাঠামোর উন্নতি, জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ, সম্পদের
সুসম বণ্টন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারকে উন্নয়ন বুঝায়। অর্থাৎ
উন্নয়ন দ্বারা একটি দেশের পরিপূর্ণ চিত্র প্রদান করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ