অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর

 

অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু

বিশ্বায়নের যুগে অর্থনীতির ক্ষেত্র দ্রুত সম্প্রসারিত হয়ে ব্যক্তি থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র থেকে বিশ্বে প্রসারিত হচ্ছে। একদিকে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং অপরদিকে সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশক হিসেবে এর পরিধি ব্যাপক।

অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু

নিম্নে অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

১. অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান

অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে মানুষের জীবনযাত্রা, তার কার্যাবলি, সাধারণ আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। ব্যক্তি কিভাবে তার সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে অসংখ্য অভাব পূরণ করে পরিতৃপ্ত হয় তা অর্থনীতির আলোচ্যবিষয়। কিন্তু সমাজ বিচ্ছিন্ন, ভবঘুরে, সন্ন্যাসী এসব ব্যক্তিগণ সমাজের সাধারণ নিয়মকানুন মেনে চলে না। তাই অর্থনীতি এদের নিয়ে আলোচনা না করে যারা পরিশ্রম করে, সমাজের নিয়মকানুন মেনে চলে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করে।

২. অর্থনৈতিক কার্যাবলি

অর্থনীতি মানুষের সকল কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে না। অর্থনীতি শুধু অর্থনৈতিক কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে। সম্পদ ও অভাবের মধ্যে সমন্বয় প্রক্রিয়ায় কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি সবাই সম্পৃক্ত। এ সমন্বয় সাধনই অর্থনৈতিক কার্যাবলি। আর এসব কার্যাবলিই অর্থনীতিতে বিবেচ্য।

৩. অপরাপর বিজ্ঞানের কিছু বিষয়বস্তু অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত

অর্থনীতি যখন প্রসারিত অর্থে বিবেচিত হয় তখন তাকে অপরাপর বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়। যেমনঃ কোন সমাজে আয়কর প্রগতিশীল হওয়া উচিত কিনা, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য করদাতাদের মনস্তাত্ত্বিক দিকও বিবেচনা করা উচিত। আবার কর আরোপের ফলে ভোগের প্রকৃতি ও প্রবণতার পরিবর্তন হতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সামাজিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা দরকার। প্রগতিশীল করব্যবস্থা সমাজে আয় বৈষম্য হ্রাসে সহায়তা করে। এখানে নীতিবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানের সহায়তা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, অনেক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য অর্থনীতির মধ্যে সমাজবিজ্ঞান, মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, রাজনৈতিক বিজ্ঞান এবং নীতিবিজ্ঞানের অংশবিশেষ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

৪. উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ

মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ উৎপাদন, বিনিময় ও ভোগ। সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন কাম্য পর্যায়ে উপনীত করা যায়, তাই অর্থনীতির অন্যতম বিষয়বস্তু। উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ বাজারে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য ক্রয় করা হয়। যেখানে ভোগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই অর্থনীতির বিষয়বস্তুর মধ্যে উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ এ তিনটি বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়।

৫. মানুষের সমস্যা সমাধানের পথপ্রদর্শক

অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবদ্ধ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার দিকনির্দেশনা দেয়। J. M. Keynes এর মতে, "It is a method rather than a doctrine an apparatus of the mind a technique of thinking which helps its possessor to draw correct conclusion." অর্থাৎ, অর্থনীতি একটি তত্ত্বের চেয়ে একটি পদ্ধতি, যা মানুষের মনের হাতিয়ার ও চিন্তার কৌশল। যার কাছে এর জ্ঞান আছে, সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৬. বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমন্বয়

অর্থনীতি অতীত ইতিহাস হতে সমস্যা সমাধানের কৌশল আয়ত্ত করে তার ভিত্তিতে বর্তমানে সৃষ্ট নতুন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ নির্দেশ করে। শুধু বর্তমানের সমস্যাসমূহ নিয়ে আলোচনা না করে, ভবিষ্যতে কি ধরনের সমস্যা আসতে পারে সে দিকসমূহ নিয়েও আলোচনা করে এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির নির্দেশনাও দিয়ে থাকে।

৭. নিরপেক্ষ বিজ্ঞান

রবিন্সের মতে, অর্থনীতিতে উচিত-অনুচিতের প্রশ্ন বর্জিত। কোন অকল্যাণমূলক কাজও যদি উপার্জনে সহায়তা করে এবং কোন ক্ষতিকর দ্রব্যের যোগান যদি সীমিত হয় এবং তা উপযোগ মিটাতে সক্ষম হয়, তাহলে তাও অর্থনীতির আওতাভুক্ত। যেমনঃ আফিমের উৎপাদন ও ব্যবহার সমাজের অকল্যাণ বৃদ্ধি করলেও তা অনেকের চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাই আফিমের উৎপাদন ও ব্যবহার অর্থনীতির আওতাভুক্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ