বাজার ভারসাম্য কিভাবে অর্জিত হয়

 

বাজার ভারসাম্য কিভাবে অর্জিত হয়

ভারসাম্য শব্দটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি বিষয় হলেও অর্থনীতিতে ভারসাম্য শব্দটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। অর্থনীতির প্রায় সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্যের ধারণা ব্যবহৃত হয়। যেমন- ভোক্তার ভারসাম্য, উৎপাদকের ভারসাম্য ইত্যাদি। 

বাজার ভারসাম্য কিভাবে অর্জিত হয়

‘ভারসাম্য' অর্থ স্থিতাবস্থা বা সাম্য অবস্থা। ভারসাম্যের ইংরেজি প্রতিশব্দ Equilibrium এসেছে ল্যাটিন শব্দ Acquus এবং Libra থেকে। Acquus অর্থ সমান এবং Libra অর্থ অনড় অবস্থা। নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সম্মুখে রেখে অর্থনীতিতে বিভিন্ন নির্ধারণী শক্তি বা চলক তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার দ্বারা একটি স্থির অবস্থায় উপনীত হয়। মোটকথা, ভারসাম্য হল এমন এক অবস্থা যেখানে অর্থনীতির দুটি বিপরীতমুখী চলকের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দ্বারা এমন এক অবস্থায় উপনীত হয় যেখান থেকে সরে যাওয়ার আর কোন প্রবণতা থাকে না। এ অবস্থায় দুটি বিপরীতমুখী শক্তি পরস্পর সমান হয়।

বাজার ভারসাম্য

অর্থনৈতিক আলোচনার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য আলোচনা। প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার অধীনে দ্রব্যের চাহিদা ও দ্রব্যের যোগানের সমতার মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। এ সমতা অবস্থাকে ভারসাম্য অবস্থা বলে এবং এ মূল্যকে ভারসাম্য মূল্য বলে। অর্থাৎ, চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য অবস্থা বলতে ঐ অবস্থা বুঝায়, যেখানে চাহিদা ও যোগান সমান হয়। এ অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য গ্রহণযোগ্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হয়। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য দেখানো হল।

 

বাজার ভারসাম্য রেখাচিত্র

উপরের চিত্রে ভূমি অক্ষে বা OX অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ এবং লম্ব বা OY অক্ষে দ্রব্যের দাম নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্রে DD হল চাহিদারেখা এবং SS হল যোগানরেখা। চিত্রে চাহিদা ও যোগানরেখাদ্বয় পরস্পরকে E বিন্দুতে ছেদ করেছে। এ E বিন্দুই হচ্ছে ভারসাম্য বিন্দু । E বিন্দুতে চাহিদা ও যোগান সমান। ফলে E বিন্দুতে ভারসাম্য দাম OP এবং ভারসাম্য পরিমাণ OQ নির্ধারিত হয়েছে। এখন যদি কোন কারণে দাম ভারসাম্য দাম অপেক্ষা বেশি হয়ে OP1 হয়, তাহলে এক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ P1R1, কিন্তু যোগানের পরিমাণ P1S। এক্ষেত্রে যোগানের পরিমাণ (P1S – P1R) = RS পরিমাণ বেশি। যোগানের পরিমাণ বেশি হওয়ায় দ্রব্য অবিক্রিত থেকে যাবে। তাই বিক্রেতারা দ্রব্যের দাম কমাতে থাকবে। এভাবে দাম কমতে কমতে OP স্তরে আসবে এবং পুনরায় ভারসাম্য স্থাপিত হবে। আবার দাম যদি ভারসাম্য দাম অপেক্ষা কমে OP2, হয়, তাহলে এক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ P2U এবং যোগানের পরিমাণ হবে P2T। এখানে চাহিদার পরিমাণ (P2U – P2T) = TU পরিমাণ বেশি। এ অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বিক্রেতারা দ্রব্যের দাম বাড়াতে থাকবে। এভাবে দাম বাড়াতে বাড়াতে OP স্তরে আসবে এবং পুনরায় ভারসাম্য স্থাপিত হবে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, যদি প্রাথমিকভাবে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য নাও থাকে কিন্তু তা পরবর্তীতে ভারসাম্যে পৌঁছবে। এভাবে সবসময় চাহিদা ও যোগানের সমতা অর্থাৎ, ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করবে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ