অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান। সামাজিক বিজ্ঞানের
ক্ষেত্র ব্যাপক। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়
ঔ নীতিবোধের সাথে সম্পর্ক রেখে সমাজবদ্ধ মানুষের কার্যাবলি পরিচালিত হয়। সে কার্যাবলির
মধ্যে সামাজিক চিত্র ফুটে উঠে। অর্থনীতি সমাজের
একটি দিক মাত্র। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান, যেমন-
- ১. রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
- ২. ইতিহাস,
- ৩. নীতিশাস্ত্র,
- ৪. ভূগোল,
- ৫. সমাজবিজ্ঞান,
- ৬. সমাজকল্যাণ ইত্যাদির সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক নিবিড়।
অন্যান্য সামাজিক
বিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
ও অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে সুগভীর সম্পর্ক। উভয়ের মাঝে সম্পর্কিত কতিপয় দিক নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১. একই পরিবারভুক্ত
: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। অর্থনীতি ছাড়া সমাজবিজ্ঞানের পরিপূর্ণতা অকল্পনীয়। উভয় শাস্ত্রই
সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশনা
দিয়ে থাকে।
২. পরস্পর পরিপূরক
: সমাজের সমস্যা সমাধান ও উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি একে
অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান
রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়াবলি পর্যালোচনা করে। অন্যদিকে, অর্থনীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতি
নিয়ে আলোচনা করে। উভয় শাস্ত্রের উদ্দেশ্য রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণ সাধন করা।
৩. পারস্পরিক
সম্পর্ক : রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণ নিয়ে আলোচনা করে। এটা রাষ্ট্র, সরকার
ও জনগণের প্রত্যেকটি
অর্থনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপৃত। রাষ্ট্রের উন্নতি শিল্প, বাণিজ্য, উৎপাদন, শ্রম ইত্যাদি
অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর নির্ভরশীল।
৪. তত্ত্বগত সম্পর্ক : অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
মধ্যে অনেক তাত্ত্বিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক মতবাদের উপর ভিত্তি করে অনেক
রাজনৈতিক মতবাদ গড়ে উঠেছে।
৫. উভয়ের উদ্দেশ্য অভিন্ন : রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের
সার্বিক কার্যাবলি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেশ ও জাতির ক্রমোন্নতির জন্য চেষ্টা করে। অর্থনীতি দেশ ও জনকল্যাণে অর্থনৈতিক
দৈন্যতা বিদূরিত করে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
৬. রাষ্ট্রবিজ্ঞান
অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি : অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রথমে জনগণের সচেতনতা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা ও সততা নিশ্চিত
করতে হবে। বাণিজ্য চুক্তি, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক, ভূমি ও কর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি
রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্র, সরকার
ও জনগণের সহায়তা ছাড়া কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, Political stability is the
pre-condition of economic development. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
৭. পারস্পরিক প্রভাব : অর্থনীতির
উপর রাষ্ট্রনীতি অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়লে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়। অনুরূপভাবে, রাষ্ট্রনীতির
উপরও অর্থনীতির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিপ্লব ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সাধিত হয়।
৮. উভয়ের সহাবস্থান : কল্যাণরাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পাশাপাশি অবস্থান করে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাঠামো যেমন- করনীতি,
শিল্পনীতি, বাণিজ্যনীতি ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। একের প্রতি অন্যের উদারনীতি ও সহযোগিতা বাঞ্ছিত
কল্যাণ লাভে সহায়ক।
৯. শুরুতে একই শাস্ত্র ছিল : শুরু থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি অভিন্ন শাস্ত্র ছিল। তখন এ দু'শাস্ত্রের সমন্বিত নাম ছিল রাজনৈতিক অর্থব্যবস্থা (Political economy)। অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও কাঠামো রাষ্ট্রের নীতিগত ধ্যানধারণা এবং শাসনব্যবস্থার উপর অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। সরকারের প্রকৃতি ও কার্যাবলি বহুল পরিমাণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও সর্বোপরি মানুষের ক্রমধারা তথা বিবর্তন জানা যায় ইতিহাস থেকে। বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন সমাজে অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের ধারা ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় বলে ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়। যুগ পরিবর্তনের সাথে একটি জাতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কিরূপ পরিবর্তন হচ্ছে তা ইতিহাসে সাক্ষ্য মেলে। অতীতের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে জ্ঞান অর্জন করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন সম্ভব। ইতিহাস একটি প্রসারিত সামাজিক বিজ্ঞান, সেখানে অর্থনীতিকে বাদ দিলে সে প্রসারতা আর থাকে না। কাজেই ইতিহাস থেকে অর্থনীতি যেমন অনেক কিছু গ্রহণ করে, তেমনি অর্থনীতিকে বাদ দিলে ইতিহাস হয়ে পড়ে অপূর্ণাঙ্গ।
নীতিশাস্ত্রের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
ভালোমন্দ, উচিত-অনুচিত, ন্যায় অন্যায় এসব বিষয় নিয়ে নীতিশাস্ত্র আলোচনা করে। মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সমাজে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কিভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত, তা নীতিশাস্ত্র নির্দেশ দেয়। মানুষ একারণে নীতিশাস্ত্রকে মেনে চলে। করনীতি, উৎপাদন নীতি, ভোগ ও বণ্টন নীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি সরাসরি নীতিশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত না হলেও পরোক্ষভাবে অর্থনীতির দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। অর্থনীতিতে নীতিবোধ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। প্রত্যেক সমাজের কিছু কিছু রীতি বা norms থাকে এবং সে অনুসারে উৎপাদন, ভোগ, বণ্টনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যেমন : অনেক সমাজেই মদ, জুয়া, অসামাজিক চলচ্চিত্র ইত্যাদি অনুমোদিত নয়। তাই অর্থনীতিও এমনভাবে পরিচালিত হয় যাতে সম্পদ বা আয় সেসব দ্রব্য উৎপাদনে বা ভোগে ব্যয়িত না হয়। আবার বস্তুবাদী অর্থনীতির প্রভাবে সমাজে ভোগের রুচিবোধের পরিবর্তনের সাথে সমাজে প্রচলিত নীতিবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। সমাজের নীতিবোধ অনেক সময় অর্থনৈতিক উন্নতি বা অবনতির কারণ হিসেবে কাজ করে। এভাবে অর্থনীতি ও নীতিশাস্ত্র পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে উঠে।
ভূগোলের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
অর্থনীতি ও ভূগোল নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ। ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (শিল্পকারখানা স্থাপন, বিভিন্নমুখী অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনা) সংঘটিত হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান ও তার পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান ব্যতিরেকে সেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের অবস্থান, জলবায়ু, মানব, খনিজ, বনজসহ যাবতীয় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। অপরদিকে, ভৌগোলিক অবস্থানের উন্নতি অর্থনীতির সার্বিক প্রগতির দ্বারা ত্বরান্বিত হয়। কাজেই অর্থনীতি ও ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক অনস্বীকার্য।
সমাজবিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতি উভয়ই
সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। সমাজবিজ্ঞান যেখানে মানুষের সমাজ নিয়ে আলোচনা করে
অর্থনীতি সেখানে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তথা সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। আদিম পর্যায়ে অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান
একই শাস্ত্রের অন্তর্গত বলে বিবেচিত হতো। তাই
অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে বেশ কিছু সম্পর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির
মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান নিয়ে সেগুলো
আলোচনা করা হল।
প্রথমত, পেশা ও আয়ের তারতম্য এবং জীবনযাত্রার
মান সম্পর্কিত অর্থনীতিবিদদের জ্ঞান সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং সামাজিক জীবনপ্রণালী ব্যাখ্যায় সমাজবিজ্ঞানীকে
সাহায্য করতে পারে। কেননা, পেশা, আয় ও বায়ের বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে সামাজিক শ্রেণী ও গোষ্ঠীর অবস্থান তথ্য তাদের
মর্যাদা ও জীবনপ্রণালী।
দ্বিতীয়ত, সমাজবিজ্ঞানীদের সমাজ সম্পর্কিত
জ্ঞান অর্থনীতিবিদদের পরিকল্পনা প্রণয়নে এক বিশেষ অবদান রাখতে পারে। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ উন্নয়নের পথে
সামাজিক সাংস্কৃতিক অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করতে এবং উন্নয়নের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি ও সাড়া জাগাতে সমাজতাত্ত্বিকদের প্রয়োজনীয়তা
গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন।
তৃতীয়ত, সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় সমাজ আর অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় হল উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ। তাই সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে। আবার সমাজজীবনও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে।
সমাজকল্যাণের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক
অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণের
মধ্যে নিম্নোক্ত সম্পর্কগুলো লক্ষ করা যায়।
১. উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের
অন্তর্ভুক্ত : অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণ উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায়
সমাজকল্যাণের সাথে অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উভয় শাস্ত্রই মানবকল্যাণের
দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যথা সামাজিক ও
অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে।
২. অভিন্ন লক্ষ্য : অর্থনীতি
ও সমাজকল্যাণের চূড়ান্ত লক্ষ্য সমাজের সার্বিক কল্যাণ। এজন্য অর্থনীতি বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক
কল্যাণ নিশ্চিত করে সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে। আর সমাজকল্যাণ যাবতীয় স্থানীয় ও জাতীয় বস্তুগত এবং মানব সম্পদের
সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সাধন করে।
৩. সার্বজনীন কল্যাণ : যে
কোন সমাজের সার্বিক ও ভারসাম্যমূলক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সামঞ্জস্য
বজায় রাখা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সর্বস্তরের কল্যাণ সাধনের উপযুক্ত পরিবেশ
ও কাঠামো সৃষ্টিতে সমাজকল্যাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
৪. স্বাবলম্বন অর্জন :
সমাজকল্যাণের লক্ষ্য হল ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির আওতাধীন সম্পদ ও সামর্থ্যের
সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে
মানুষকে সাবলম্বন অর্জন সহায়তা করা। অর্থনীতিও অসীম অভাবকে সসীম সম্পদের বিকল্প
ব্যবহার দ্বারা পূরণ করে সাবলম্বন অর্জনে
সহায়তা করে।
৫. সম্পদের সুষম বণ্টন :
অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণ প্রাপ্ত বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু সদ্ব্যবহার ও
সুষম বণ্টনের প্রতি
গুরুত্বারোপ করে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অধিকার ও বঞ্চনা প্রবন্ধে প্রমাণ
করেছেন, দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য ঘাটতি কোন
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়। তিনি ক্ষুধা দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে দরিদ্র শ্রেণির
প্রকৃত অর্থ বৃদ্ধি এবং সুষম বণ্টনের প্রতি
অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেন।
৬. কর্মসংস্থান :
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রশিক্ষণ ও
আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক
ও সামাজিক দিক জড়িত। সুতরাং, এক্ষেত্রেও অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণ একই সাথে কাজ করে
যাচ্ছে।
৭. জীবনমান উন্নয়ন :
মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা
বাঞ্ছনীয়। সুতরাং, যৌথ
কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণ ঘনিষ্ঠভাবে
সম্পর্কযুক্ত।
৮. কল্যাণরাষ্ট্র ও
কল্যাণমুখী ধারণা : কল্যাণরাষ্ট্র ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি ধারণা প্রসারের ফলে সমাজকল্যাণ
ও অর্থনীতির সম্পর্ক
ক্রমান্বয়ে আরো ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ বোলডিং বলেছেন, “সমাজকল্যাণও
অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া
আধুনিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যই হচ্ছে
সমাজকল্যাণ।”
৮. কল্যাণরাষ্ট্র ও কল্যাণমুখী ধারণা : কল্যাণরাষ্ট্র
ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি ধারণা প্রসারের ফলে সমাজকল্যাণ ও অর্থনীতির সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে আরো
ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ বোলডিং বলেছেন, “সমাজকল্যাণও
অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া আধুনিক কল্যাণমুখী
রাষ্ট্রে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যই হচ্ছে সমাজকল্যাণ।”
৯. চাহিদা পূরণ : অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা
ও চিকিৎসা প্রভৃতি মৌল মানবিক চাহিদাসহ সমাজে বিভিন্ন চাহিদা বিদ্যমান। কিন্তু চাহিদা পূরণের সম্পদ
সীমিত। অসীম সম্পদের বিকল্প ব্যবহার দ্বারা অসীম চাহিদা পূরণে অর্থনৈতিক
পদক্ষেপ জরুরি। এ পর্যায়ে উভয়ের সাদৃশ বিদ্যমান।
১০. সমাজকল্যাণ বিজ্ঞানের উৎস হল অর্থনীতি : অর্থনীতি
পাঠের মাধ্যমে সমাজকর্মীরা সম্পদের সুষম বণ্টন, সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহার সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন করতে
পারে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কেয়ার্নক্রস বলেছেন, “সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের অসীম অভাবের সাথে সম্পদের স্বল্পতার সামঞ্জস্য
সাধনের চেষ্টা করছে এবং বিনিময়ের মাধ্যমে কিভাবে এসব চেষ্টাগুলো পারস্পরিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করছে অর্থশাস্ত্র তাই আলোচনা
করে।"
১১. সামঞ্জস্য বিধান : মাথাপিছু ও জাতীয় আয় দ্রুত
বস্তুগত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমাজকাঠামো, মূল্যবোধ ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের
মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। সুতরাং, অর্থনৈতিক উন্নয়ন
অর্থবহ করে তোলার জন্য সামঞ্জস্য বিধান অপরিহার্য।
১২. সমস্যার সমাধান : সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের
জন্য মৌল মানবিক চাহিদাসহ অনুভূত ও পরিবর্তিত চাহিদার পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। আর এ সমস্যার সমাধানের
জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
১৩. পরিকল্পনা প্রণয়ন : পরিকল্পনার আধুনিক সংস্করণ
হচ্ছে সামাজিক ও সমাজকল্যাণ পরিকল্পনা। অর্থনৈতিক ও সমাজকল্যাণ পরিকল্পনার সমন্বিত রূপই
হচ্ছে উন্নয়ন পরিকল্পনা।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অর্থনীতির
সাথে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, নীতিশাস্ত্র, ইতিহাস
ও ভূগোলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে অর্থনীতির সাথে এ বিষয়গুলোর যেমন সম্পর্ক আছে তেমনি একাধিক ক্ষেত্রে পার্থক্য
পরিলক্ষিত হয়। কারণ, সমাজবিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার আলোচনার ক্ষেত্র হল সম্পূর্ণ
আলাদা।
0 মন্তব্যসমূহ