প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ জীবন ধারণের প্রয়োজনে বিভিন্ন
রকম দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে আসছে এবং
তা করছে প্রকৃতির অকৃপণ সহযোগিতার মাধ্যমে। কিন্তু উৎপাদন আসলে কি তা সম্পর্কে অনেকের
মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। তাই
অর্থনীতিতে উৎপাদন কি তা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন প্রয়োজন।
উৎপাদনের উপাদান বা উপকরণসমূহ (Factors of Production)
উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সীমিত যোগান বিশিষ্ট যে কোন বস্তু বা সেবাকে উৎপাদনের উপাদান বা উপকরণ বলা হয়। বাতাস, সূর্যের
আলো ইত্যাদি প্রকৃতির অসীম দান ছাড়া মাটি, খনিজ, বনজ, জলজ পদার্থ, মানুষের শারীরিক ও মানসিক শ্রম, যন্ত্রপাতি
ইত্যাদি যা কিছু উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় তাকেই অর্থনীতিতে উৎপাদনের উপকরণ বলে। অবশ্য বর্তমান সময়ে সূর্যের আলোও উৎপাদনের
উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন :
সোলার প্লান্টে সূর্যের আলোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে
অর্থনীতিবিদগণ উৎপাদনের উপাদানসমূহকে
তাঁদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। সুতরাং অর্থনৈতিক বিবেচনায়
সমগুণসম্পন্ন উপকরণসমূহের এক একটি শ্রেণিকে উৎপাদনের
উপাদান বলে। উৎপাদনের উপাদান চারটি। এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. ভূমি (Land)
সাধারণত ভূমি বলতে মাটিকে বুঝানো
হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমি শব্দটি ব্যাপক অর্থে বুঝানো হয়। অর্থনীতিতে ভূমি বলতে প্রকৃতি প্রদত্ত সকল সম্পদকে বুঝায়,
যার যোগান সীমিত এবং যার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। অর্থনীতিতে মাটি, খনিজ, বনজ, জলজ সম্পদ সহ যা কিছু প্রকৃতি প্রদত্ত এবং
অপ্রচুর তাকেই ভূমি বলা হয়।
২. শ্রম (Labour)
পারিশ্রমিকের বিনিময়ে উৎপাদন
কাজে ব্যবহৃত মানুষের সকল প্রকার দৈহিক ও মানসিক কর্মক্ষমতাকে শ্রম বলা হয়। নিজের আনন্দ বা আত্মপ্রসাদের
জন্য কৃত পরিশ্রম ব্যতিরেকে সকল প্রকার দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ যেমন: দিনমজুর, শিক্ষক, ডাক্তার,
শিল্পী, চাকরিজীবী ইত্যাদি সকলেই অর্থনীতিতে শ্রমিক বলে বিবেচিত।
৩. মূলধন (Capital)
মূলধন হচ্ছে উৎপাদনের উৎপাদিত
অংশ। অর্থাৎ, মূলধন হচ্ছে উৎপাদনের সে অংশ যা পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, মানুষ যা কিছু
উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছে তাকে মূলধন বলে। যন্ত্রপাতি, উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত বিল্ডিং, কৃষি সরঞ্জাম
সবই মূলধন। মূলধন হচ্ছে উৎপাদনের সঞ্চিত
অংশ।
৪. সংগঠন (Organization)
উৎপাদনের সকল উপকরণ সংগ্রহ,
সমন্বিত ও উৎপাদন কাজে নিয়োজিত করা এবং উৎপাদনকার্য পরিচালনা করার উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে সংগঠন
বলে। উৎপাদন কাজে সবসময় ঝুঁকি বহন করতে হয়। এ ঝুঁকি যে বহন করে সে সংগঠক।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ কথা বলা যায় যে, উৎপন্ন দ্রব্যের
প্রকৃতি এবং ব্যবহৃত প্রযুক্তির ভিত্তিতে
বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্বের পার্থক্য ঘটে। তবে সার্বিকভাবে কারিগরি প্রযুক্তির উৎকর্ষের
ফলে আজ ভূমি ও শ্রম অপরিহার্য উপাদান
হওয়া সত্ত্বেও উৎপাদনে মূলধন ও সংগঠনের ভূমিকাই মুখ্য।
0 মন্তব্যসমূহ