উৎপাদকের ভারসাম্য বলতে কি বুঝ
ভারসাম্য (equilibrium) অর্থ স্থিতিশীলতা। অর্থনীতিতে বিভিন্ন নির্ধারণী শক্তি রয়েছে। যেখানে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যে একটি স্থির অবস্থায় উপনীত হয়। এ অবস্থাকে ভারসাম্য বলে। উৎপাদকে ভারসাম্য বলতে এমন একটি অবস্থাকে বুঝায় যেখানে উৎপাদক পরিবর্তনীয় উপাদানের এমন এক সংমিশ্রণ নির্ধারণ করে যাতে সর্বনিম্ন ব্যয়ে সর্বাধিক পরিমাণ উৎপাদন পরিচালনা করা যায়। উৎপাদকের মূল লক্ষ্য মুনাফা সর্বোচ্চ করা। মোট আয় ও মোট ব্যয়ের ব্যবধান হচ্ছে মুনাফা। প্রত্যেক উৎপাদক উৎপাদনের পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করে যাতে তার মুনাফা সর্বাধিক হয়। উৎপাদকের ভারসাম্য দু'ভাবে অর্জিত হতে পারে। অর্থাৎ দুটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে উৎপাদকের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। যথা:
- ১. নির্দিষ্ট ব্যয় সাপেক্ষে উৎপাদন সর্বোচ্চকরণ এবং
- ২. নির্দিষ্ট উৎপাদন সাপেক্ষে খরচ সর্বনিম্নকরণ।
নিম্নে এ দু'টি শর্ত ব্যাখ্যা করা হল।
উৎপাদকের ভারসাম্যের শর্ত কি কি
১. নির্দিষ্ট ব্যয়সাপেক্ষে উৎপাদন সর্বোচ্চ করণ
উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে মুনাফা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু উৎপাদক মুনাফা
প্রত্যাশায় উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তন করতে করতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছায় যেখানে
উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তন বা বৃদ্ধি করা আর সম্ভব হয় না, তখন তাকে উৎপাদকের
ভারসাম্য বলে। উৎপাদন সর্বোচ্চকরণের শর্ত হল নিম্নরূপ।
ক. প্রয়োজনীয় শর্ত : সম উৎপাদন ও সমব্যয় রেখার ঢাল পরস্পর সমান হবে।
খ. পর্যাপ্ত শর্ত : যে বিন্দুতে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ হয় সেখানে সম
উৎপাদন রেখা মূল বিন্দুর দিকে উত্তল হবে।
নিম্ন ব্যয় স্থির অবস্থায় উৎপাদনের পরিবর্তন দ্বারা উৎপাদকের ভারসাম্য দেখানো হল।
উপরের চিত্রে, উৎপাদনের পরিমাণ যখন Q2 তখন ব্যয় AB প্রদত্ত অবস্থায় উৎপাদক ভারসাম্যে পৌঁছায়। ভারসাম্যের প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত শর্ত C বিন্দুতে পালিত হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদক ইচ্ছা করলে a অথবা b বিন্দুতে উৎপাদন নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু AB রেখার মাধ্যমে তার পক্ষে Q2 সম উৎপাদন রেখার C বিন্দুতে পৌঁছা সম্ভব। সুতরাং, উৎপাদন সর্বোচ্চকরণের স্বার্থে সে C বিন্দুতে উৎপাদন নির্ধারণ করবে।
২. নির্দিষ্ট উৎপাদন সাপেক্ষে খরচ বা ব্যয় সর্বনিম্নকরণ
উৎপাদক খরচ সর্বনিম্নকরণের মাধ্যমেও মুনাফা সর্বোচ্চ করতে পারে। এক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ স্থির ধরা
হয় অর্থাৎ একটি মাত্র সম উৎপাদন রেখা বিবেচনা করা হয়। এই রেখা দ্বারা নির্দেশিত উৎপাদন বিভিন্ন ব্যয় অবস্থায়
করা সম্ভব। কিন্তু উৎপাদক উপাদানসমূহের এমন সংমিশ্রণ পছন্দ করবে যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন করতে তার ব্যয়
সর্বনিম্ন হয়। নিম্নে চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হল।
উপরের চিত্রানুযায়ী, R বিন্দুর তুলনায় S ও T বিন্দুতে বেশি উৎপাদন
ব্যয় নির্দেশিত। কেননা CD রেখার তুলনায় EF রেখা বেশি ব্যয় প্রকাশ করে। চিত্রে লক্ষ্য করা যায়,
R বিন্দুতে কম ব্যয়ে ঐ একই পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব। ফলে উৎপাদক ব্যয় কমানোর জন্য S ও T বিন্দুতে উৎপাদন না করে
R বিন্দুতে উৎপাদন করবে। কেননা R বিন্দুতে ভারসাম্যের প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত শর্ত পালিত হয়।
সুতরাং, উৎপাদক তার উৎপাদন ঠিক রেখে ব্যয় সর্বনিম্নকরণের মাধ্যমে
ভারসাম্যে পৌঁছাতে পারে। আবার উৎপাদন ব্যয় ঠিক রেখে উৎপাদন পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারসাম্যে পৌঁছাতে
পারে। এভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদনে ন্যূনতম ব্যয় নির্দেশ উপাদান সংমিশ্রণের মাধ্যমে ভারসাম্যে পৌঁছানোকে উৎপাদকের
ভারসাম্য বিলে।
0 মন্তব্যসমূহ