জীবন কাকে বলে
অধিকাংশ বিজ্ঞানীর অনুমান আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি
বছর আগে পৃথিবীতে সজীব বস্তুর আবির্ভাব ঘটেছিল। পরবর্তীতে কালের আবর্তে সরল জীব থেকে বিবর্তনের ধারায় বৈচিত্র্যময়
জটিল জীবের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নে জীবনের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল।
ক. প্রোটোপ্লাজমের সুসংগঠিত কার্যকলাপকে জীবন (Life) বলে।
খ. যে সুসংগঠিত শক্তি দ্বারা কোন বস্তুর বৃদ্ধি, প্রজনন,
অনুভূতি, অভিব্যক্তি, পুষ্টি, রেচন, চলনসম্পন্ন হয় ও পরবর্তীতে পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয় তাকে জীবন
বলে।
গ. পরিবেশের সাথে জীবের ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তির উত্থান
ঘটে তাকে জীবন বলে। মূলত জীবন এক ধরনের
শক্তি যা কোন জীবন্ত জীব ধারণ করে।
প্রাণী কাকে বলে
যে সকল জীব পরভোজী, সচল, নির্দিষ্ট দেহাকৃতি বিশিষ্ট,
উত্তেজনায় সাড়া প্রদান করে এবং সেলুলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে না তাদেরকে সাধারণত প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অন্যভাবে বলা যায় যেসব ইউক্যারিওটিক জীব সাধারণত ক্লোরোফিল বহন করে না ও নিজ দেহে খাদ্যের সংশ্লেষণ ঘটাতে
পারে না এবং খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে তাদেরকে প্রাণী বলে। উদাহরণস্বরূপ
বলা যায় মানুষ (Homo sapiens), ব্যাঙ (Bufo melanostictus) ইত্যাদি। নিম্নশ্রেণীর অনেক
প্রাণী রয়েছে যেমন Euglena যাদের দেহে ক্লোরোফিল বিদ্যমান, ফলে এরা খাদ্য সংশ্লেষণে
সক্ষম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য
হুইটেকার (Whittaker) ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে পাঁচ জগৎ (five kingdom) বিশিষ্ট শ্রেণিবিন্যাস
পদ্ধতির প্রচলন করেন । তিনি সব ধরনের জীবকে
Monera, Protista, Planta, Fungi ও Animalia নামে পাঁচটি জগতে বিভক্ত করেন।
- জগৎ ১. Monera- সুসংগঠিত নিউক্লিয়াসবিহীন প্রোক্যারিয়ট জীব।
- জগৎ ২. Protista এককোষী ইউক্যারিওটিক জীবসমূহ।
- জগৎ ৩. Plantae— বহুকোষী সালোকসংশ্লেষণকারী জীবসমূহ।
- জগৎ ৪. Fungi - সকল জীব যারা শোষণের মাধ্যমে পুষ্টিসংস্থান করে।
- জগৎ ৫. Animalia- যে সকল জীব খাদ্য গলাধকরণ করে বা অনেক পরজীবীর ক্ষেত্রে শোষণের মাধ্যমে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
উল্লিখিত শ্রেণিবিন্যাসের ফলে Euglena-র মত প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্য ধারণকারী এককোষী জীবেরা প্রাণী বা উদ্ভিদ সে বিতর্কের অবসান ঘটে।
প্রাণীর বৈশিষ্ট্য (Identifying characteristics of animals)
নিম্নে প্রাণীর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।- ১. প্রাণী সাধারণত নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। এরা পরভোজী বা হলজোয়িক পুষ্টি পদ্ধতিতে পুষ্টি সাধন করে।
- ২. এদের পুষ্টি সাধনের মধ্যে নিম্নোক্ত পর্যায় দেখা যায়। (i) খাদ্য গ্রহণ; (ii) পরিপাক; (iii) পরিশোষণ; (iv) আত্তীকরণ; (v) অপরিপাককৃত খাদ্যবস্তু নিষ্ক্রমণ।
- ৩. প্রাণী দেহে পরিপাক, রেচন, রক্ত সংবহন ও প্রজনন সংঘটিত হয়।
- ৪. এরা সচল অর্থাৎ সাধারণত চলাচলে সক্ষম।
- ৫. সংবেদী অঙ্গের মাধ্যমে প্রাণী দ্রুত সাড়া প্রদান করতে সক্ষম।
- ৬. এদের দৈহিক বৃদ্ধি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘটে।
- ৭. এদের কোষে কোষ প্রাচীর থাকে না।
- ৮. প্রাণী কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না।
- ৯. প্রাণী দেহে নাইট্রোজেনঘটিত রেচন পদার্থ ইউরিয়া তৈরি হয়।
- ১০. প্রতিটি প্রাণীর সুনির্দিষ্ট জীবন চক্র রয়েছে— এরা জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন, মৃত্যু এসব পর্যায়ক্রমিক ধাপে জীবনচক্র সম্পন্ন করে।
0 মন্তব্যসমূহ