প্রাণিবিজ্ঞান কি, কাকে বলে, এর উৎপত্তি ও জনক কে

 

প্রাণিবিজ্ঞান কি, কাকে বলে, এর উৎপত্তি ও জনক কে

মানুষের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বড় বিস্ময় ও রহস্যের আঁধার। পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য উপকরণ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা, বাস্তব বিষয় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে নিগূঢ় রহস্য উদঘাটন করা, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়ের উপর অভিজ্ঞতার আলোকে অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা করে নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি ও কল্যাণে নিয়োজিত করে। মূলত বিজ্ঞানের কাঁচামাল হচ্ছে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বস্তু। এসব প্রাপ্ত বিষয়াদি, উপকরণ ও বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধিৎসা, অনুশীলন ইত্যাদি বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য। প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিশেষণ অবদানের অনুশীলনই হচ্ছে বিজ্ঞান। পূর্বসুরীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তত্ত্ব থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের অগ্রযাত্রাই বিজ্ঞানকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধশালী করে চলেছে।

প্রাণিবিজ্ঞান কাকে বলে

প্রাণী সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানকে প্রাণিবিজ্ঞান বলে। ব্যাপক অর্থে বলা যায়- জীববিজ্ঞানের যে শাখায় পৃথিবীর সকল প্রকার প্রাণীর উৎপত্তি, স্বভাব, বাসস্থান, শ্রেণিবিন্যাস, গঠন, জীবন ইতিহাস, পরিবেশের সাথে সম্পর্ক, পারস্পরিক সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, বংশগতি, আণবিক গঠন, অভিযোজন, ক্ষতিকর ও উপকারী দিক ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology) বলে।

প্রাণিবিজ্ঞান কি, এর উৎপত্তি ও জনক

মূলত অজীব (abiotic) ও জীব (biotic) উপাদানের সমন্বয়ে পরিবেশ গঠিত । সুতরাং বিজ্ঞান চর্চা প্রধানত ভৌতবিজ্ঞান (Physical science) ও জীব বিষয়ক বিজ্ঞান (bio science) এ দুটো ধারায় সংঘটিত হয়। উল্লিখিত ১ম ধারায় পরিবেশের অজীব উপাদানের গঠন, শক্তি, রূপান্তর, পদার্থের রূপান্তর ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা হয়। পক্ষান্তরে বিজ্ঞানের ওপর ধারার পরিবেশের জীব উপাদান অর্থাৎ জীবন ও জীবসত্ত্বা নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়। জীবদের সম্পর্কে আলোচনার বিজ্ঞান হল জীববিজ্ঞান। (biology- Gr-bios-life, logos knowledge) | Jean Baptist Lamark এবং Travirenus ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম biology শব্দটির অবতারণা করেন। সময়ের সাথে মানুষের জীবন চর্চার পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। তৎসঙ্গে বিশেষায়িত জ্ঞানের আলোকে জীববিজ্ঞান চর্চা এগিয়ে চলেছে। কালের চক্রে জীববিজ্ঞান চর্চা প্রধানত উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান এ দুটো ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানে উদ্ভিদ সম্পর্কে আলোচনা, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ইত্যাদি করা হয়। পক্ষান্তরে প্রাণিবিজ্ঞানে বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগৎ সম্পর্কে আলোচনা, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা করা হয়।

প্রাণিবিজ্ঞান মূলত জীববিজ্ঞানের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাচীন শাখা। ইংরেজি Zoology শব্দের বাংলা পরিভাষা প্রাণিবিজ্ঞান। এ শব্দটি গ্রিক শব্দ zoon animal এবং logos knowledge শব্দদ্বয়ের সমন্বয় গঠিত হয়। মূলত প্রাণী সম্পর্কে বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনাকে প্রাণিবিজ্ঞান বলা যায়। গ্রিক দার্শনিক Aristotle (৩৮৪-৩২২ BC) সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রাণীদের বর্ণনা দেন। তাই তাঁকে প্রাণিবিজ্ঞানের জনক (Father of Zoology) বলা হয়। বাস্তবে প্রাণিবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এই বিজ্ঞান পাঠে পৃথিবীতে বসবাসরত সকল প্রজাতির প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারা যায়। প্রাণের উৎপত্তি, প্রোটোপ্লাজমের আবির্ভাব, বিকাশ, কোষের উৎপত্তি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রাণিবিজ্ঞানের প্রারম্ভিকা বা প্রাণিবিজ্ঞানের সূচনা গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়। আদি কোষ, প্রকৃত কোষের, সংগঠন স্তরের (level of organization) পর্যায়ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে কলা, অঙ্গ, অঙ্গতন্ত্রের উৎপত্তির মধ্য দিয়ে জটিল প্রাণীর আবির্ভাব প্রাণিবিজ্ঞানের সূচনা (Introduction Zoology) গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয়। জীববৈচিত্র্যের আবির্ভাব, ক্রমজটিলতার বিবর্তনের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস, কোষ, জিনতত্ত্ব, কলাস্থান বিষয়ক মৌলিক বিষয়গুলি প্রাণিবিজ্ঞানের সূচনায় স্থান পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ