কোষ চক্র কি এবং কাকে বলে | কোষ চক্রের বিভিন্ন দশা চিত্রসহ

 

কোষ চক্র কি এবং কাকে বলে | কোষ চক্রের বিভিন্ন দশা চিত্রসহ

কোষ চক্র কি এবং কাকে বলে

জীবদেহের মৌলিক গঠন ও কাজের একক যার মধ্যে জৈব রাসায়নিক ও ভৌত ক্রিয়া সুসম্পন্ন হওয়ায় জীবনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাকে কোষ বলে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যার ফলে দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন হয়ে থাকে। সজীব কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন দশাসমূহ সর্বদাই চক্রাকারে বা পর্যায়ক্রমিক পথে আবর্তিত হয়। মাতৃকোষ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় অপত্য কোষের। নানা ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়ে অপত্য কোষ বর্ধিত হয় ও বিভাজনের দিকে অগ্রসর হয়। এভাবে কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন দশার চক্রাকার আবর্তনকে কোষচক্র বলে।

কোষ চক্রের বিভিন্ন দশার বিবরণ (Description of cell cycle)

জীবের জীবন চক্রের মত সজীব কোষের একটি চক্র রয়েছে। কোষ চক্রের শুরু হয় কোষ বিভাজনের শেষ দশা টেলোফেজে উৎপন্ন অপত্য কোষ থাকে। অতঃপর এর পরিসমাপ্তি ঘটায় কোষগুলির পরবর্তী বিভাজনের শেষ সময়। অপত্য কোষগুলি মাতৃকোষের চেয়ে আকারে ছোট থাকে এবং এর নিউক্লিয়াসে DNA এর পরিমাণ অর্ধেক থাকে। পুনরায় বিভাজন ক্ষমতা অর্জন করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এ সব অপত্য কোষে সাইটোপ্লাজমীয় ও নিউক্লিও উপাদান সংশ্লেষিত হয়। 

কোষ চক্র
কোষ চক্র

প্রকৃতপক্ষে কোষচক্র গতিময় ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এই চক্রকে নিম্নোক্ত দুটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ১. বর্ধন পর্যায় বা ইন্টারফেজ
  • ২. বিভাজন পর্যায় বা মাইটোসিস

১. বর্ধন পর্যায় বা ইন্টারফেজ (Interphase)

এক মাইটোসিসের শেষ টেলোফেজ থেকে অপর মাইটোসিসের প্রারম্ভ অর্থাৎ প্রোফেজ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত সময়কে ইন্টারফেজ বলে। এ পর্যায়কে বিভাজন পূর্ব প্রস্তুতি পর্যায় ও (Preparatory phase) বলে। কেননা এই পর্যায় অপত্য কোষগুলিতে পরবর্তী বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের সংশ্লেষ ও সংরক্ষণ ঘটে। একটি কোষের জীবনকালে বর্ধন পর্যায়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। বিপাক ক্রিয়া বা জৈব সংশ্লেষ এ পর্যায় সবচেয়ে বেশি হয় তাই এ পর্যায়কে বিপাক পর্যায় বা জৈব সংশ্লেষ পর্যায় হিসেবে অভিহিত করা হয়।

জৈব সংশ্লেষণের কার্যাবলীর উপর ভিত্তি করে বর্ধন পর্যায়কে নিম্নোক্ত তিনটি উপ-পর্যায় ভাগে ভাগ করা হয়।

(i) G, উপ-পর্যায় বা Gap উপ-পর্যায়।

(ii) S উপ-পর্যায় বা DNA উপ-পর্যায়।

(iii) G, উপ-পর্যায় বা Gap, উপ-পর্যায়।

নিম্নে এসব উপ-পর্যায়ের বর্ণনা দেওয়া হল-

i. G1 উপ-পর্যায় : G1 উপ-পর্যায়কে প্রাক DNA সংশ্লেষ বা প্রস্তুতিমূলক উপ-পর্যায় বলা যেতে পারে। কোষচক্রের মোট সময়ের মধ্যে এ উপ-পর্যায়ে ৩০%-৪০% সময় ব্যয় হয়। এ সময় অপত্য কোষের সাইটোপ্লাজমের সংশ্লেষ ঘটে ফলে কোষ আকারে বৃদ্ধি পায়। এ উপ-পর্যায়ে কতিপয় এনজাইম, mRNa, tRNA, রাইবোজোম, প্রোটিন, DNA এর প্রতিলিপির জন্য নাইট্রোজেন বেস (base) প্রভৃতির সংশ্লেষ ঘটে। অতঃপর এসব সংশ্লেষিত দ্রব্যাদি কোষে সংরক্ষিত হয়। এ উপ-পর্যায় ক্রোমোজোমের প্রসারণ ঘটে এবং এক সূত্রকে পরিণত হয়ে ক্রোমাটিন জালিকায় রূপ নেয়। G1 উপ-পর্যায়ে ক্রোমোজোমের DNA অনুলিপনের জন্য উদ্দীপ্ত ও সক্রিয় হয়।

ii. S উপ-পর্যায় : s উপ-পর্যায়ে DNA-এর উভয় সূত্রক (Strands) এর প্রতিলিপি গঠনের লক্ষ্যে উভয় সূত্রকের জন্য নতুন সম্পূরক সাথী সংশ্লেষিত হয়। ফলে DNA-এর প্রতিরূপ গঠিত হয়। এ সময় DNA-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হিস্টোন প্রোটিনের সংশ্লেষ ঘটে। কোষ চক্রের মোট সময়ের ৩০%-৫০% সময় S উপ-পর্যায় ব্যয় হয়।

iii. G2 উপ-পর্যায় : Gap2 উপ-পর্যায় কোষের দ্বিতীয় বার বৃদ্ধি ঘটে। এসময় নিউক্লিয়াসের মধ্যে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়। অতঃপর rRnA, mRNA ও নিউক্লিয়াসের RNA-এর সংশ্লেষ ঘটে। এ উপ-পর্যায়ে RNA-এর সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। ফলে কোষের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ঘটায় এবং পরবর্তী বিভাজনের প্রস্তুতি শেষ হয়। এ উপ-পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যাদি সম্পন্ন হতে কোষ চক্রের মোট সময়ের ১০%-২০% প্রয়োজন হয়।

২. বিভাজন পর্যায় (Mitotic phase)

ইন্টারফেজ পর্যায়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষ বিভাজন পর্যায় বিভাজিত হয়। একে কোষের মাইটোটিক বিভাজন পর্যায়ও বলা হয়ে থাকে। কোষচক্রের বিভাজন পর্যায় হয় শেষ পর্যায়। বিভাজন পর্যায়ের ৪টি পর্যায়ক্রমিক ধাপে প্রোফেজ, মেটাফেজ, এনাফেজ ও টেলোফেজে নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। অতঃপর নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়। এ সময় সাইটোপ্লাজমের মধ্যেও নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। টেলোফেজ ধাপে নিউক্লিয়াসের বিভাজন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন শুরু হয়। সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস বলে। সাইটোকাইনেসিসের মাধ্যমে সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয়ে দুটো অপত্য কোষের সৃষ্টি করে। সৃষ্ট এ অপত্য কোষ (daughter cell) পুনরায় নতুন কোষ চক্র শুরু করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ