মাইটোকন্ড্রিয়া কি এবং কাকে বলে | এর চিত্র, গঠন ও কাজ বর্ণনা কর

 

মাইটোকন্ড্রিয়া কি এবং কাকে বলে | এর চিত্র, গঠন ও কাজ বর্ণনা কর

মাইটোকন্ড্রিয়া কি এবং কাকে বলে

দেহের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনের প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস সাইটোপ্লাজমীয় অতি সূক্ষ্ম পর্দা আবদ্ধ অঙ্গাণুকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে।

আবিষ্কার (Discovery) : ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেঙা সর্বপ্রথম এ কোষীয় অঙ্গাণুগুলিকে মাইটোকন্ড্রিয়া নামকরণ করেন। যদিও অ্যানাটমি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম কোষের মধ্যে এগুলি পর্যবেক্ষণ করেন।

অবস্থান (Location) : কোষের আয়তনের প্রায় ২০% মাইটোকন্ড্রিয়া। এগুলি সাইটোপ্লাজমে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ সবুজ শৈবাল ব্যতীত সকল জীবকোষে মাইটোকন্ড্রিয়া বিদ্যমান।

উৎপত্তি (Origin) : বিভাজনের মাধ্যমে এদের মাইটোকন্ড্রিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

আকৃতি (Shape) : শারীরবৃত্তীয় কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে মাইটোকন্ড্রিয়ার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত এরা দণ্ডাকার, গোলাকার, সূত্রাকার, ডিম্বাকার, আংটির মত ইত্যাদি আকৃতির দেখা যায় ।

আয়তন (Size) : মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩-৭ pm এবং প্রস্থে ০.৫-২ pm পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সংখ্যা (Number) : কোষের কার্যকারিতার উপর মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা নির্ভর করে। সাধারণত ২০০-৩০০ পর্যন্ত এক একটি কোষে দেখা যায়। তবে কোন কোষে সর্বাধিক এদের সংখ্যা ১৫ লক্ষ হতে পারে।

মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন (Structure of Mitochondria)

মাইটোকন্ড্রিয়ার দেহ প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত দুটো একক আবরণীর দ্বারা গঠিত হয়। এদের মধ্যে বাইরের মসৃণ আবরণী ও ভিতরেরটি অনিয়ত ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মত কতগুলি ভাঁজ সৃষ্টি করে। এসব ভাঁজ বা অভিক্ষেপকে ক্রিটিং বলে। দুটো আবরণীর মাঝে ফাঁকা স্থানের দূরত্ব ৬০-৮০Å এখানে কো-এনজাইম প্রোটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের এনজাইম RNA ইত্যাদি থাকে।

মাইটোকন্ড্রিয়া এর চিত্র
মাইটোকন্ড্রিয়া এর চিত্র

মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ফাঁকা অংশটি যে দানাদার বস্তু দ্বারা পূর্ণ থাকে তাকে ম্যাট্রিক্স (matrix) বলে। মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP সিনথেটেজ নামক গোলাকার বস্তু থাকে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টি ব্যাপী অনেক ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম পরিলক্ষিত হয়।

রাসায়নিক গঠন (Chemical composition) : মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রোটিন ৬০-৭০%। লিপিড ২৫-৩৫%। RNA ০.৫% ও সামান্য DNA বিদ্যমান। মাইটোকন্ড্রিয়ার বহিরাঞ্চলটি প্রোটিন, গ্লিসারাইড, লেসিথিন এবং কোলেস্টরল বহন করে। এছাড়া ভেতরের অংশটি অ্যালবুমিন, ভিটামিন, A, C, B, B12 গ্লুটাথিওন ও কো-এনজাইম বহন করে।

মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ (Function of Mitochondria)

  • ১. মাইটোকন্ড্রিয়ায় খাদ্যস্থ শক্তি নির্গত হয় তাই একে শক্তি ঘর (Power house) বলে।
  • ২. মাইটোকন্ড্রিয়া শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদনে শক্তি যোগায়।
  • ৩. এখানে কিছু পরিমাণ RNA ও DNA উৎপন্ন হয়।
  • ৪. মাইটোকন্ড্রিয়া স্নেহ বিপাকে অংশগ্রহণ করে।
  • ৫. মাইটোকন্ড্রিয়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়ন ও ফসফেট সঞ্চয় করে।
  • ৬. প্রোটিন সংশ্লেষণের প্রয়োজনীয় এনজাইম ধারণ করে।
  • ৭. হরমোন নিঃসরণ করে।
  • ৮. মাইটোকন্ড্রিয়ায় ক্রেব চক্রের প্রয়োজনীয় বিক্রিয়া সংঘটিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ