ডিম্বাণু কি
যৌন জননের সাথে জড়িত স্ত্রী প্রাণীকুল, যে স্ত্রী
জনন কোষ সৃষ্টি করে তাকে ডিম্বাণু বলে। ডিম্বাণু মূলত
একটি হ্যাপ্লয়েড কোষ। ডিম্বাণুর প্লাজমা
পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে ও এর অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম থাকে। ডিম প্রসবকারী বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর ডিমের বহিরাবরণগুলি
পরিস্ফুটনরত ভ্রূণকে তাপমাত্রা, শুষ্কতা, পরিবর্তিত pH, বিকিরণ, দূষণ, যান্ত্রিক আঘাত ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এরা
শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণুর নিষেককে প্রতিহত করতে সহায়তা করে এবং নিষেকের পর ডিমের স্বাভাবিক ক্লিভেজ বজায় রাখে।
ডিম্বাণুর গঠন (Morphology of ovum)
ডিম্বাণুর বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণনা দেয়া হল।
১. ডিম্বাণু আবরণী (Egg membrane)
ডিম্বাণু যে সমস্ত আবরণী দ্বারা পর্যায়ক্রমে পরিবেষ্টিত থাকে তাদেরকে ডিম্বাণু
আবরণী বলে। ডিম্বাণুতে পর্যায়ক্রমে নিম্নোক্ত তিন
ধরনের আবরণী দেখা যায়।
- ক. ভিটেলিন আবরণী (Viteline membrane) : ডিম্বাণু যে প্লাজমা পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে, তাকে ভিটেলিন আবরণী বলে। এ আবরণীর বাইরে ও ভেতরে প্রোটিন স্তর থাকে। এ দুই স্তরের মাঝে লিপিড স্তর বিদ্যমান। ভিটেলিন আবরণীর বহিঃবৃদ্ধির ফলে এখানে অনেক মাইক্রোভিলাই সৃষ্টি হয় যারা ফলিকল কোষ থেকে নানান ধরনের দ্রব্য ডিম্বাণুতে পরিবহন করে।
- খ. প্রাইমারী আবরণী (Primary membrane) : ডিম্বাশয়ের গাত্রে ডিম্বাণু থাকাকালীন ভিটেলিন আবরণীর বাইরের দিকে যে সংরক্ষণমূলক আবরণীর সৃষ্টি হয় তাকে প্রাইমারী আবরণী বলে। এই আবরণী বিভিন্ন প্রাণীতে বিভিন্ন নামে পরিচিত । মাছে এ আবরণীকে কোরিয়ন (chorion) ও স্তন্যপায়ীতে একে জোনা পেলুসিডা (zona pellucida) নামে পরিচিত।
- গ. সেকেন্ডারী আবরণী (Secondary membrane) : প্রাইমারী ডিম্বাণু আবরণীকে ঘিরে ফলিকল কোষের বা ডিম্বনালী থেকে প্রাপ্ত সাধারণত এক স্তর কোষ সমৃদ্ধ আবরণীকে সেকেন্ডারী আবরণী বলে। উভচরদের ক্ষেত্রে এ আবরণীটি জেলীর মতো। পাখির ক্ষেত্রে এটা চার স্তরবিশিষ্ট একটি জটিল আবরণী। স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে এটাকে করোনা রেডিয়েটা (corona radiata) বলে। সেকেন্ডারী আবরণী ডিম্বাণুকে সুরক্ষা ও পুষ্টি উপাদান সংগ্রহে সহায়তা করে।
২. সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm)
ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমকে
উত্তপ্লাজম (oplasm) বলে। উত্তপ্লাজমে RNA, পানি মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, রাইবোজোম ও অন্যান্য ইনক্লুশন
(inclusion) বিদ্যমান।
৩. ডিওটেরোপ্লাজম (Deuteroplasm)
ভ্রূণ বিকাশের
জন্য ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত খাদ্যকে ডিওটেরোপ্লাজম বলে। কুসুমের পরিমাণের উপর ডিম্বাণুর আকার আকৃতি নির্ভর করে।
স্তন্যপায়ীদের ডিম্বাণুতে কুসুম প্রায় না থাকার কারণে এরা আণুবীক্ষণিক হয়ে থাকে।
8. নিউক্লিয়াস (Nucleus)
ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস বেশ স্পষ্ট ও গোলাকার হয়ে থাকে। সাধারণত প্রাণীকোষের তুলনায় এই নিউক্লিয়াস প্রায় ২০০-৩০০ গুণ বড় হয়। কুসুম না থাকলে সাধারণত নিউক্লিয়াস ডিম্বাণুর কেন্দ্রে থাকে। পক্ষান্তরে কুসুম সমৃদ্ধ ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস এক পার্শ্বে অবস্থান করে। নিউক্লিয়াসের ভেতরে RNA ও ক্রোমাটিন বস্তু বিদ্যমান।
ডিম্বাণুর প্রকারভেদ (Types of ovum)
কুসুমের পরিমাণের ভিত্তিতে ডিম্বাণুর প্রকারভেদ
নিম্নে বর্ণিত হল।
১. অ্যালেসিথাল (Alecithal) : যেসব ডিম্বাণুতে কুসুম
প্রায় থাকে না তাদেরকে অ্যালেসিথাল ডিম্বাণু বলে। উদাহরণ- মানুষ ও অন্যান্য অমরাবাহী স্তন্যপায়ীর ডিম্বাণু।
২. মাইক্রোলেসিথাল (Microlecithal) : যে সকল
ডিম্বাণুতে অতি অল্প পরিমাণে কুসুম ও অন্যান্য সঞ্চিত খাদ্য থাকে তাদেরকে মাইক্রোলেসিথাল ডিম্বাণু বলে। উদাহরণ –
একাইনোডার্ম, ইউরোকর্ডেট ইত্যাদির ডিম্বাণু।
৩. মেসোলেসিথাল (Mesolecethal) : যেসব ডিম্বাণুতে
মাঝারি পরিমাণ কুসুম থাকে তাদেরকে মেসোলেসিথাল ডিম্বাণু বলে । উদাহরণ – উভচর প্রাণীর ডিম্বাণু।
৪. ম্যাক্রোলেসিথাল
(Macrolecithal) : যেসব ডিম্বাণুতে প্রচুর পরিমাণে কুসুম থাকে তাদেরকে ম্যাক্রোলেসিথাল
ডিম্বাণু বলে। উদাহরণ-সরীসৃপ, পাখি ইত্যাদির ডিম্বাণু।
কুসুমের পরিমাণের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার ডিম্বাণু |
সাইটোপ্লাজমে কুসুমের বণ্টনের ওপর ভিত্তি করে ডিম্বাণুর প্রকারভেদ
নিম্নে বর্ণিত হল।
১. আইসোলেখিয়াল (Isolethal) : যেসব ডিম্বাণুতে সূক্ষ্ম কুসুম দানা
সাইটোপ্লাজমে সমভাবে বিস্তার লাভ করে তাদেরকে আইসোলেথিয়াল ডিম্বাণু বলে। উদাহরণ- একাইনোডার্ম, ইউরোকর্ডেট ও সিফালোকর্ডেট প্রাণীর
ডিম্বাণু।
২. সেন্ট্রোলেসিথাল (Centrolecithal) : যেসব ডিম্বাণু সাইটোপ্লাজমের
মাঝামাঝি স্থানে কুসুমকেন্দ্রিভূত থাকে তাদেরকে সেন্ট্রোলেসিথাল ডিম্বাণু বলে। উদাহরণ- পতঙ্গের ডিম্বাণু।
৩. টেলোলেসিথাল (Telolecithal) : যেসব ডিম্বাণুর কুসুম ডিম্বাণুর
এক প্রান্তে (ভেজিটেবিল পোল) অবস্থান করে এবং নিউক্লিয়াসসহ সাইটোপ্লাজম অপর প্রান্তে (অ্যানিমেল পোল)
থাকে তাদেরকে টেলোলেসিথাল ডিম্বাণু বলে।
0 মন্তব্যসমূহ