শুক্রানু কি | শুক্রানুর গঠন | শুক্রানুর ছবি

 

শুক্রানু কি | শুক্রানুর গঠন | শুক্রানুর ছবি

শুক্রানু কি

শুক্রাশয় থেকে সৃষ্ট হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম বিশিষ্ট পুরুষজনন কোষকে শুক্রাণু বলে। শুক্রাণু আকার আকৃতিতে বিভিন্ন প্রাণীতে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। শুক্রাণু সাধারণত ফ্লাজেলাযুক্ত ও চলনক্ষম হয়ে থাকে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ফ্লাজেলাবিহীন শুক্রাণু দেখা যায়। সাধারণত একটি শুক্রাণুর মৌলিক গঠন কাঠামো প্রায় একই রকম। একটি শুক্রাণুর দেহ অবিচ্ছিন্ন প্লাজমাপর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের শুক্রাণু প্লাজমাপর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের শুক্রাণু আণুবীক্ষণিক, সরু, দীর্ঘাকার ও লম্বা লেজ বিশিষ্ট হয়। মানুষের শুক্রাণুর ব্যাস ২.৫ মাইক্রন ও দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ মাইক্রন হয়।

শুক্রানুর গঠন

একটি শুক্রাণুর দেহের বিভিন্ন অংশ নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচিত হল।

শুক্রানুর ছবি

১. মস্তক (Head) : একটি শুক্রাণুর স্ফীতকায় কোণাকৃতি সম্মুখ অংশ মস্তক নামে পরিচিত। মস্তকের অধিকাংশ অঞ্চল হ্যাপ্লয়েড (n) সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট নিউক্লিয়াস দ্বারা পূর্ণ থাকে। এছাড়া শুক্রাণুর মস্তকের সম্মুখের টুপি সদৃশ অংশটিকে অ্যাক্রোসোম বলে। গলগি বস্তু থেকে সৃষ্ট অ্যাক্রোসোমে লাইসিন (lysin) নামক উৎসেচক বিদ্যমান । এক্সোজোমের উৎসেচকের সহায়তায় শুক্রাণু ডিম্বাণু পর্দা বিগলিত করে ভেতরে প্রবেশ করে। শুক্রাণুর নিউক্লিয়াসে DNA এবং হিস্টোন ও নন-হিস্টোন প্রোটিন বিদ্যমান।

২. গ্রীবা (Neck) : শুক্রাণুর মাথা ও মধ্যখণ্ডের মাঝখানে অবস্থিত স্বচ্ছ, সরু, সংযোগস্থলকে গ্রীবা বলে। এখানে প্রোক্সিমাল সেন্ট্রিওল ও ডিস্টাল সেন্ট্রিওল পরস্পর সমকোণে অবস্থান করে। প্রোক্সিমাল সেন্ট্রিওলটি নিউক্লিয়াসের সাথে ডিম্বাণুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং জাইগোটের প্রথম বিভক্তিতে সহায়তা করে।

৩. মধ্যখণ্ড (Middle piece) : শুক্রাণুর গ্রীবা পরবর্তী যে অংশটি মাইটোকন্ড্রিয়া, সাইটোপ্লাজম ও অক্ষীয় সূত্রের সমন্বয় গঠিত হয় তাকে মধ্যখণ্ড বলে। মূলত প্রোক্সিামাল সেন্ট্রিওল হতে রিং সেন্ট্রিওল পর্যন্ত অঞ্চলই শুক্রাণু মধ্যাংশ নামে পরিচিত। এখানে সর্পিলাকার স্প্রিং এর মত মাইটোকন্ড্রিয়া এক্সিয়াল ফিলামেন্টকে আবৃত করে রাখে। মধ্যখণ্ডের অ্যাক্সিয়াল ফিলামেন্ট, প্রোক্সিমাল সেন্ট্রিওল থেকে সৃষ্ট নয়টি তন্ত্র দ্বারা গঠিত হয়। মধ্যখণ্ডে অবস্থিত মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে সৃষ্ট শক্তি দ্বারা শুক্রাণু লেজ নাড়িয়ে চলাচল করে।

৪. লেজ বা ফ্লাজেলাম (Tail or flagellum) : মধ্যখণ্ডের পরে শুক্রাণুর শেষভাগে অবস্থিত অতি সূক্ষ্ম লম্বা ও সঞ্চারণশীল অংশকে লেজ বলে। এটা শুক্রাণুর দীর্ঘতম অংশ। লেজের অক্ষীয় ফিলামেন্টটি একজোড়া কেন্দ্রীয় তন্ত্রকে ঘিরে নয়টি পরিধিয় তন্ত্রর সমন্বয়ে গঠিত হয়। লেজের প্রথম যে অংশটি স্থূল আবরণে আবৃত থাকে তাকে প্রধান খণ্ড (Principal price) বলে। পক্ষান্তরে লেজের পশ্চাৎ দিকে অবস্থিত যে অংশটি আবরণে আবৃত নয়, তাকে শেষ খণ্ড বলে। লেজ বা ফ্লাজেলাম শুক্রাণুকে গতিশীল করে নিষেকের জন্য ডিম্বাণুর নিকট পৌছাতে সহায়তা করে।

শুক্রাণুর অঙ্গসংস্থানিক বিশেষত্ত্ব নিম্নে বর্ণিত হল।

  • ১. শুক্রাণুর মন্ত্রক মাকু আকৃতির হওয়ায় এরা যে কোন জলীয় মাধ্যমে ন্যূনতম বাধা অতিক্রম করে চলাচল করতে সক্ষম হয়।
  • ২. নিউক্লিয়াস থেকে পানি, RNA, নিউক্লিওলাস ইত্যাদি অপসারিত হওয়া শুক্রাণুর ওজন যেমন হ্রাস পায় তেমনি চলাচলেও সুবিধা হয়।
  • ৩.মধ্যখণ্ডে অবস্থিত মাইটোকন্ড্রিয়াগুলি শক্তির যোগান দিয়ে লেজ অংশে সঞ্চালন সৃষ্টি করে শুক্রাণুকে চলাচলে সক্ষম করে।
  • ৪.মস্তকের সম্মুখভাগে অবস্থিত অ্যাক্রোসোম মধ্যস্থ উৎসেচক (enzyme) ডিম্বাণুর পর্দার বিগলন ঘটায়, ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুতে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
  • ৫.লেজ ফ্লাজেলামের অনুরূপ হওয়ায় তরল মাধ্যমে শুক্রাণুকে সাঁতার কাটতে সহায়তা করে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ