জীববৈচিত্র্য কি এবং কাকে বলে | জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

 

জীববৈচিত্র্য কি এবং কাকে বলে | জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্য কি এবং কাকে বলে

পৃথিবীর জলে, স্থলে ও বায়ুমণ্ডলে বসবাসকারী বৈচিত্র্যময় জীবকূলকে জীববৈচিত্র্য বলে। অন্যভাবে বলা যায় - জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে বসবাসরত সকল প্রকার জীবদের মধ্যে জিনগত, বাসস্থানগত, প্রজাতি ও প্রকরণগত ভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বলে। জীববৈচিত্র্য তৈরির বিভিন্ন কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।

জীবকুল ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য এদের মধ্যে অবস্থানগত ও আচরণগত তারতম্যের সৃষ্টি হয় ফলে জীববৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- মানব জগৎ একই প্রজাতি Homo sapien-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও একজন ইউরোপিয়ান শ্বেতাঙ্গ ও আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের অঙ্গসংস্থানগত অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে এদের গায়ের রঙ, চুলের আকার-আকৃতি, বর্ণ, নাক ও চোখের আকার-আকৃতি ভিন্ন ধরনের হয়।

জিন বংশগতির ধারক ও বাহক। বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি জিনের মাধ্যমে বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয়। বিভিন্ন ধরনের জিনের গঠনগত। সূক্ষ্ম পরিবর্তনের ফলে মিউটেশনের সূত্রপাত হয়। যার ফলশ্রুতিতে জীববৈচিত্র্যের সূচনা হয়।

কোন বাস্তুতন্ত্রে বসবাসরত জীবের বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কিছু সংখ্যক উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে নতুন পরিবেশের সূত্রপাত ঘটে। পরিবর্তিত নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য জীবদেহের পরিবর্তন ঘটে যার দরুন জীববৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্যে বহুবিধ গুরুত্বের মধ্যে কতিপয় উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব নিম্নে বর্ণিত হল।

বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব

বাস্তুতন্ত্রে সজীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে খাদ্য চক্রের মাধ্যমে শক্তির প্রবাহ অব্যাহত থাকে। ফলে বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশে শক্তির ভারসাম্য রক্ষিত হয়। পক্ষান্তরে বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হলে শক্তিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সুতরাং দেখা যায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

উদ্ভিদ ও প্রাণী উৎস থেকে মানুষ খাদ্য লাভ করে। এছাড়াও জীববৈচিত্র্যের প্রধান উপাদান উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে মানুষ বস্ত্র, বাসস্থান তৈরির সরঞ্জামাদি জ্বালানি, ঔষধপত্র ইত্যাদি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়। কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, লাক্ষা চাষ, মৌচাষ, রেশম চাষ, বনজ সম্পদ ও বনজ সম্পদ ভিত্তিক শিল্প কারখানা ইত্যাদি জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল।

বিয়োজক

জীববৈচিত্র্যের সদস্য অণুজীব (microbs), বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, বিয়োজক বা decomposer হিসেবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত দেহ পঢ়িয়ে বিশ্লিষ্ট করে। ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও জীববৈচিত্র্যের সদস্য যেমন— শিয়াল, খেঁকশিয়াল, কাঠবিড়ালি, ব্যাঙ, টিকটিকি, পতঙ্গভুক কীটপতঙ্গ ইত্যাদি আমাদের অর্থকরী ফসলের ক্ষতিকর পতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। কতিপয় নান্দনিক প্রাণী যেমন— ময়ূর, পাণ্ডা, কবুতর, শৃগাল, শীতের মাইগ্রেটরি পাখি ইত্যাদি মানুষকে আনন্দ দান করে।

এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়, অন্যান্য জীবের এখানে বসবাসের যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি রক্ষার জন্য এদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই তাদের প্রতিবেশী হিসেবে বিবেচনা করে দুর্বল ও নিরীহ প্রাণীদের সাহায্যে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য এগিয়ে আসা মানুষের মানবতার অংশ ও কর্তব্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ