সিলোম কি এবং কাকে বলে
বহুকোষী (metazoa) প্রাণীদের দেহ প্রাচীর ও পৌষ্টিক
নালীর প্রাচীরের মধ্যবর্তী সিলোম রসে পূর্ণ বা শূন্য স্থানকে সিলোম বলে। যে সিলোম
ভ্রূণীয় মেসোডার্ম স্তর থেকে উদ্ভূত হয় যা দেহ প্রাচীরের দিক থেকে পেরিটোনিয়াম
প্যারাইটাল স্তর এবং অস্ত্রের প্রাচীরের দিক থেকে পেরিটোনিয়াম ভিসেরাল স্তর
দ্বারা আবৃত থাকে তাকে প্রকৃত সিলোম (true coelom) বলে।
বিভিন্ন ধরণের সিলোম |
সিলোমের প্রকারভেদ
উৎপত্তি ও প্রকৃতি অনুসারে সিলোমকে প্রধানত
নিম্নেবর্ণিত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
(১) অপ্রকৃত সিলোম (Pseudocoelom) : যে সিলোম
ভ্রূণীয় মেসোডার্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করে না এবং বাইরের দিকে সরাসরি দেহ প্রাচীর ও
ভিতরের দিকে অন্ত্রের প্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে তাকে অপ্রকৃত সিলোম বলে।
অপ্রকৃত সিলোম মূলত ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের সময় এক্টোডার্স ও এন্ডোডার্মের মাঝে
প্রশস্ত স্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উদ্ভব ঘটে। এক্ষেত্রে মেসেন্টের গঠিত হয় না এবং
নির্দিষ্ট অঞ্চলে মেসোডার্ম পুঞ্জিভূত থাকে। উদাহরণ – Rotifera, Nematoda ইত্যাদিতে
অপ্রকৃত সিলোম দেখা যায়।
(২) প্রকৃত সিলোম (True coelom) : ভ্রূণীয়
পরিস্ফুটনের সময় মেসোডার্যের এক অংশ সোমাটিক মেসোডার্ম, এক্টোডার্মের ভিতরের
গায়ে এবং মেসোডার্মের অপর অংশ স্পাঙ্কনিক মেসোডার্ম, পৌষ্টিক নালীর চতুর্দিকে
পরিবেষ্টিত হওয়ার ফলে উভয় স্তরের মাঝে সিলোম বলে শূন্য যে স্থানের আবির্ভাব ঘটে
তাকে প্রকৃত সিলোম বলে। এক্ষেত্রে এক্টোডার্ম ও মেসোডার্মের স্তরের সমন্বয়ে দেহ
প্রাচীর এবং মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম স্তরের সমন্বয়ে পরিপাক নালীর প্রাচীর গঠিত
হয়। সোমাটিক মেসোডার্ম স্তর ও স্প্লাঃকনিক মেসোডার্ম স্তর দুটিকে পেরিটেনিয়াম
স্তর বলা হয়। মেসোডার্মের উল্লম্ব অংশ মেসেন্টারী নামে পরিচিত মূলত উভয়দিকে
পেরিটেনিয়াম স্তর পরিবেষ্টিত দেহ প্রাচীর ও পৌষ্টিকনালীর প্রাচীরের মধ্যবর্তী
স্থানে প্রকৃত সিলোম অবস্থান করে। প্রকৃত সিলোমকে উৎপত্তিগতভাবে তিনটি ভাগে ভাগ
করা যায় । যথা,
(i) সাইজোসিলোম
(Schizocalom) : কিছু বহুকোষী প্রাণীদের মেসোডার্ম চিরে এর প্যারাইটাল অংশ দেহ প্রাচীরের গায়ে
আর ভিসেরাল অংশ এন্ডোডার্মের গায়ে লেগে
যায়। ফলে সিলোম চতুর্দিক দিয়ে মেসোডার্ম
পরিবৃত্ত হয়ে পড়ে। এ ধরনের সিলোমের সূচনা লার্ভাদেহের
ব্লাস্টোপোর অঞ্চল থেকে শুরু হয় এবং এক্টোডার্ম ও মেসোডার্মের স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এ ধরনের প্রকৃত সিলোমকে সাইজোসিলোম বলে। উদাহরণ:
Platyhelminthes, Nemartia, Annelida, Mollusca, Arthropoda ও কিছু সংখ্যক মাইনর ফাইলার প্রাণীসমূহের সাইজোসিলোম পরিলক্ষিত হয়।
(ii) এন্টারোসিলোম
(Enterocoelom) : যে সিলোম লার্ভা দেহের আর্কেন্টেরন (archenteron) অঞ্চল থেকে মেসোডার্মাল থলির
মত (mesodermal puch) উৎপত্তি লাভ করে তাকে
এন্টারোসিলোম বলে। লার্ভা দেহের এন্টেরন
থেকে এ সিলোম উৎপন্ন হয়, তাই একে এন্টারো সিলোম
বা এন্টারোসিল বলে আখ্যায়িত করা হয়। উদাহরণ—Chaetognatha,
Echinodermate, Hemichordata, Chordata ও
Brachiopoda প্রাণীগোষ্ঠী-তে এন্টারোসিলোম পাওয়া যায়।
(iii) মেসেনকাইমাল সিলোম (Mesenchymal coelom) : মেসেনকাইম স্তরের
কোষগুলি পুনঃসজ্জিত হয়ে সিলোমকে পরিবেষ্টন
করে এক ধরনের উন্নত সাইজোসিলোম গঠিত হয়। তাকে মেসেনকাইমাল সিলোম বলে।
উদাহরণ – Phoronida পর্বের শ্রেণীদের মধ্যে মেসেনকাইমাল
সিলোম পরিলক্ষিত হয়।
সিলোমের গুরুত্ব (Importance of coelom)
সিলোমে সিলোম রস ও বিভিন্ন অংগ অবস্থান করে। হিমোসিল সঞ্চালনে সহায়তা করে । সিলোমিক তরল রেচন কাজে সহায়তা করে।
এছাড়া গঠনগত ও কার্যগত দিক বিবেচনা করে সৃষ্ট সিলোমের প্রকারভেদ অনুযায়ী প্রাণীদের শ্রেণীবিন্যাস করা
হয়। তাই সিলোম প্রাণী জগতের শ্রেণীবিন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
0 মন্তব্যসমূহ