পিত্তরস কি এবং পিত্তরসের উপাদান সমূহ
যকৃত কোষ নিঃসৃত রসকে পিত্তরস বলে। ক্ষুদ্র নালিকার
মাধ্যমে এ রস পিত্তথলিতে এসে সঞ্চিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর
উদ্দীপনায় যকৃত কোষ হতে পিত্ত নিঃসরণ প্রভাবিত হয়। পরিপাক নালীর ডিওডেনামে
প্রোটিন ও স্নেহ খাদ্যের উপস্থিতি নিঃসরণ
হার বৃদ্ধি করে। পিত্তথলিতে সঞ্চিত পিত্তরস পিত্তনালী বেয়ে ডিওডেনামে এসে স্নেহ ও
প্রোটিন খাদ্যের পরিপাকে সহায়তা করে।
পিত্তরস সামান্য ক্ষারধর্মী সান্দ্র,
তিক্তস্বাদযুক্ত উজ্জ্বল হলুদ অথবা সবুজ বর্ণের তরল পদার্থ এর pH ৫-৭.৫। এতে পানির
মাত্রা প্রায় ৯৭.৪% থাকে। তবে সদ্য নিঃসৃত
পিত্তরস হতে পিত্তথলিতে সঞ্চিত পিত্তরস অনেকটা বেশি গাঢ়, এতে পানির পরিমাণ শতকরা ৮৩.৯ ভাগ থাকে। পিত্তথলির প্রাচীর কর্তৃক
অবশোষণের ফলেই পিত্ত গাঢ় হয়। এজন্য পিত্তরসের অন্যান্য উপাদানের মাত্রায় টাটকা ও সঞ্চিত পিত্তরসের ক্ষেত্রে বেশ তারতম্য
পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে পানি ছাড়াও অন্যান্য যে
সকল উপাদান থাকে পিত্তরসে তা উল্লেখ করা হল। অবশ্য, এদের মাত্রায় অনেক ক্ষেত্রেই
তারতম্য দেখা যায়।
- ১) পিত্তলবণ: টরোকোলিক ও গ্লাইকোকোলিক এসিড উদ্ভূত
সোডিয়াম ও পটাসিয়াম যুক্ত লবণ পিত্তরসের পিত্তলবণ হিসেবে বিদ্যমান।
- ২) পিত্তরঞ্জক :
বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন পিত্তের ২টি রঞ্জক উপাদান। তৃণভোজীদের পিত্তে বিলিভার্ডিন
বেশি থাকে। তাই তাদের পিত্ত সবুজ বর্ণের
হয়; অন্যান্য প্রাণীদের পিত্ত বিলিরুবিন সমৃদ্ধ থাকে তাই সেক্ষেত্রে বর্ণ হলদে
হয়। লোহিত কণিকার ধ্বংসপ্রাপ্তিতে
হিমোগ্লোবিনের বিমুক্তি ঘটে বিলিভার্ডিন সৃষ্টি হয়। এতে ২টি ঐ পরমাণু যুক্ত হয়ে
বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়।
- ৩) কোলেস্টেরল : পিত্তের লিপিডধর্মী বিশেষ উপাদানটি
হল কোলেস্টেরল যা পিত্তলবণে দ্রবীভূত থাকে। পিত্ত প্রবাহের গতি মন্থর হলে পিত্তথলি অধিকতর পানি শোষিত হয়। ফলে কোলেস্টেরল
অধঃক্ষেপিত হয়ে ক্রমান্বয়ে পিত্তে পাথর সৃষ্টি
করতে পারে।
- ৪) ফ্যাটি এসিড ও লেসেখিন : পিত্তে বেশ কয়েক ধরনের ফ্যাটি এসিড ও লেসিথিন নামক চর্বি উপাদান থাকে।
- ৫) খনিজ লবণ : পিত্তরসে সোডিয়াম আয়ন, পটাসিয়াম
আয়ন, ক্যালসিয়াম আয়ন ইত্যাদির ক্লোরাইড, ফসফেট, কার্বনেট ও বাইকার্বনেট লবণ থাকে।
পিত্তরসের কাজ
- ১) পিত্তলবণ, স্নেহখাদ্যের পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করে। পিত্তলবণ পানির পৃষ্ঠটান হ্রাস করে স্নেদ্রব্যের ইমালসন প্রকৃতি ঘটায়। ফলে, উহার কণাগুলোর ব্যাস ০.৫ মাইক্রোন অপেক্ষাও ক্ষুদ্রতর হয়ে পড়ে। এতে স্নেহবিন্দুর উপরিতলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায় এবং লাইপেজ এনজাইমের কার্যসম্পাদনে সুবিধা হয়।
- ২) পিত্তলবণ স্নেহদ্রব্যের বিশ্লেষণে সৃষ্ট গ্লিসেরাইড ও ফ্যাটি এসিডের সাথে যৌগ সৃষ্টি করে শোষণমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- ৩) পিত্তলবণ স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিনের শোষণ ত্বরান্বিত করে।
- ৪) পিত্তরঞ্জক বাফার উপাদান হিসেবে কাজ করে।
- ৫) পিত্তরস সামগ্রিকভাবে ভারী ধাতু যেমন—কপার, জিঙ্ক, আয়রন, জীবাণু ও জীবাণুজাত প্রতিবিম্ব এবং কোলেস্টেরলের দেহ হতে নির্গমন ঘটায়।
- ৬) পিত্তরস অস্ত্রে এসে খাদ্যবস্তুকে ক্ষারীয় করে দেয়; ফলে অগ্ন্যাশয় এবং আন্ত্রিক এনজাইমের কার্যকারিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
0 মন্তব্যসমূহ