বাজারে অবস্থান গ্রহণ কাকে বলে
একটি পণ্যের অবস্থান বলতে ভোক্তারা পণ্যটির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পণ্যটিকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে অর্থাৎ প্রতিযোগীদের পণ্যের প্রেক্ষিতে কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ভোক্তার মনে যে স্থান দখল করে নেয় তাকে বাজারে অবস্থান গ্রহণ বলে। উদাহরণস্বরূপ ডিটারজেন্টের ক্ষেত্রে Tide পারিবারিক ডিটাজেন্ট, Era ঘনীভূত তরল ডিটারজেন্ট এবং Cheer তাপমাত্রার ডিটারজেন্ট হিসেবে ভোক্তার মনে অবস্থান নিয়েছে। গাড়ির ক্ষেত্রে Toyota, Hyundai মিত্যব্যয়ী গাড়ি হিসেবে Mercedes এবং Cadillac বিলাসবহুল গাড়ি হিসেবে এবং BMW ভালো কার্যসম্পাদনকারী হিসেবে ভোক্তার মনে অবস্থান গ্রহণ করেছে। নিম্নে বাজারে অবস্থান গ্রহণ সম্পর্কে বিভিন্ন লেখকের প্রদত্ত সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :Philip Kotler & Gary Armstrong বলেন, "Market positioning is arranging for a product to occupy a clear, distinctive and desirable place relative to competing products in the minds of target consumers." অর্থাৎ, বাজারে অবস্থান গ্রহণ হলো লক্ষ্য ক্রেতাদের মনে প্রতিযোগীদের পণ্যের তুলনায় একটি পণ্যের পরিষ্কার, স্বতন্ত্র ও কাঙ্ক্ষিত অবস্থান দখল করার ব্যবস্থা করা।
Bovee, Houston এর মতে , "Positioning is the process of achieving a desired place is the mind of target market." অর্থাৎ, অবস্থান গ্রহণ হলো লক্ষ্য বাজারের মনে কাঙ্ক্ষিত স্থান অর্জনের একটি প্রক্রিয়া।
Thill Zikmund এবং D'Amico এর মতে, "Positioning is the planning the market position the company wishes to occupy." অর্থাৎ, অবস্থান গ্রহণ হচ্ছে কোম্পানি অর্জন করতে ইচ্ছুক এমন বাজার অবস্থানের পরিকল্পনা করা।
বাজারে অবস্থান গ্রহণ প্রসঙ্গে MeCarthy এবং Perreault বলেন, "Positioning shows where customers locate proposed and/or present brands in a market." অর্থাৎ, প্রস্তাবিত এবং/অথবা বর্তমান ব্র্যান্ডকে ক্রেতারা কিভাবে বাজারে অবস্থান দেয় অবস্থান গ্রহণ সেটা প্রদর্শন করে।
বাজারে অবস্থান গ্রহণের কৌশল
বাজারে অবস্থান গ্রহণের জন্য একজন বাজারজাতকারীকে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। Devid Aaker এবং J. Gary Shansby সাত ধরনের অবস্থান গ্রহণ কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন। এ কৌশলের সাথে Aaker এবং Mayer আরো একটি অবস্থান কৌশল যোগ করেছেন। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে অবস্থান গ্রহণের কৌশলগুলো দেখানো হলো।
নিম্নে বাজারে অবস্থান গ্রহণের কৌশলসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. পণ্যের বৈশিষ্ট্যভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Product attributes strategies)
পণ্যের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য। অভীষ্ট ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে কোম্পানি ক্রেতাদের মনে পণ্যের অবস্থান সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- "Canon ক্যামেরা মানে জীবন্ত ছবি” এই ধরনের প্রচার করে ক্রেতার মনে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
২. উপকারভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Benefit positioning)
পণ্যের উপকারিতা ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে ক্রেতাদের মনে অবস্থান গ্রহণ করা যায়। যেমন- পেপসোডেন্ট টুথপেস্ট ২৪ ঘণ্টা জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দাঁতকে রক্ষা করে। এভাবে ক্রেতাদের মনে অবস্থান নিয়েছে।
৩. ব্যবহারভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Use or application positioning)
পণ্যটি কোন ধরনের কাজে ব্যবহার হয় সে দিক থেকে ভালোভাবে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে বাজারে অবস্থান গ্রহণ করা হয়। যেমন- গরমের দিনে ঠাণ্ডা পানিতে রুহ আফজা শরবৎ হিসেবে ক্রেতাদের মনে অবস্থান নিয়েছে।
৪. ব্যবহারকারীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (User positioning)
এক্ষেত্রে পণ্যটিকে কোন নির্দিষ্ট ক্রেতা শ্রেণীর জন্য উপযোগী এভাবে তুলে ধরা হয় যেমন- Johnson & Johnson শিশুদের জন্য বেবি ক্রীম তৈরি করেছে।
৫. প্রতিযোগীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Competitors positioning)
এক্ষেত্রে কোম্পানি তার পণ্যকে প্রতিযোগীর পণ্য অপেক্ষা ভালো এভাবে দাঁড় করিয়ে ক্রেতার মনে অবস্থান সৃষ্টি করা হয়। যেমন- Compaq ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে IBM এর সাথে সরাসরি তুলনা ব্যবহার করে।
৬. পণ্যের শ্রেণীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Product class positioning)
এ কৌশলে বাজারজাতকারী পণ্যের বিভিন্ন শ্রেণীর ভিত্তিতে ক্রেতার মনে অবস্থান সৃষ্টি করে। যেমন- অনেক মার্জারিন প্রস্তুতকারক তাদের মার্জারিনকে মাখনের বিপরীতে অবস্থান দেয়।
৭. পণ্যের গুণগত মানভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Product quality positioning)
এক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান ভোক্তাদের মনে অবস্থান নিয়েছে। ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে বাজারে অবস্থান সৃষ্টি করা যায়। যেমন- Sony সর্বোচ্চ মানের টেলিভিশন হিসেবে।
৮. সাংস্কৃতিক চিহ্নভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ (Cultural symbols positioning)
কোম্পানি সাংস্কৃতিক চিহ্নের ভিত্তিতে ক্রেতার মনে অবস্থান সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- বাঙালিদের পোশাক লুঙ্গি এবং ফতুয়া বাঙালী সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করে।
0 মন্তব্যসমূহ