এতেকাফ কি | এতেকাফের ফযীলত | এতেকাফের নিয়ম-কানুন | এতেকাফ ভঙ্গকারী কার্যসমূহ

 

এতেকাফ কি | এতেকাফের ফযীলত | এতেকাফের নিয়ম-কানুন  |  এতেকাফ ভঙ্গকারী কার্যসমূহ

এতেকাফ কি এবং কাকে বলে


রোযা রাখা অবস্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে এ'তেকাফ বলে। এতেকাফ অর্থ
অবস্থান করা, নিঃসঙ্গ থাকা, সার্বক্ষণিক সঙ্গ, বিচ্ছিন্ন থাকা

এতেকাফের প্রকারভেদ

এ'তেকাফকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কেফায়া।

২। ওয়াজিব।

৩। মোস্তাহাব। 

এতেকাফের ফযীলত

এতেকাফের ফযীলত অপরিসীম। যেহেতু রমযান মাসের শেষ দশদিনে এ'তেকাফ করিলে শবে কদরের নির্দিষ্ট ২৭শে রমযান না হইলেও ঐ দশদিনের যে কোন একদিনের তো অবশ্যই হইবে। সুতরাং একাধারে ঐ দশদিন মসজিদে বসিয়া দিবারাত্র এ'তেকাফ করিলে শবেকদর তন্মধ্যে থাকিবেই । অতএব শবে কদরের ইবাদত দ্বারা ইহ-পারলৌকিক অফুরন্ত কায়েদা নছীব হইতে আর কোনরূপ বাধা থাকিবে না । একমাত্র এ'তেকাফই ইহার মূল কারণ। এতেকাফের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে ফরমাইয়াছেন, যাহারা অন্ততঃপক্ষে একদিন মাত্র এ'তেকাফ করিবে তাহাদের এবং জাহান্নামের মধ্যখানে এমন একটি খন্দকের অন্তরায় হইবে, যাহার প্রতিটি খন্দকের প্রশস্ততা পাঁচশত বৎসরের রাস্তাতুল্য হইবে।

এতেকাফের এইরূপ ফযীলতের কারণ এই যে, মানুষ দুনিয়ার মোহ-মায়া ভোগ করিবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাহা সব পরিত্যাগ করিয়া জ্যান্তে মৃতবৎ আল্লাহ তায়ালা গৃহে থাকিয়া একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপাসসনায় মগ্ন থাকে এবং তাহার সমস্ত কিছুই আল্লাহ তায়ালার উপর সোপর্দ করিয়া দেয়। দুনিয়ার লোভ, লিপ্সা, কর্ম প্রয়োজন কোন কিছুই তাহাকে প্রলুব্ধ করিতে পারে না।

রমযান মাসের দশ তারিখের এতেকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ

এ'তেকাফ রমযান মাসের ২০ তারিখের পর সূর্যাস্তের পূর্ব হইতে আরম্ভ করিয়া রমযানের শেষ দিন পর্যন্ত পুরুষদের পক্ষে মসজিদে এবং মহিলাদের পক্ষে নিজগৃহের ইবাদত কক্ষে পাক পবিত্র অবস্থায় কেবল ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্জনে বাস করাকে এ'তেকাফ বলে। ইহা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া । গ্রাম বা মহল্লার মধ্যে যে কোন একজন এ'তেকাফ করিলেই সকলের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাইবে। কেউ না করিলে সকলকেই সুন্নাত তরক করিবার দায়ে গোনাহগার হইতে হইবে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল রমযানেই এ'তেকাফ করিয়াছেন । এ'তেকাফ পালন করিলে অশেষ নেকী লাভ হয়। মানত করিয়া এ'তেকাফ। উহা আদায় করা ওয়াজিব। এইরূপ এ'তেকাফ রমযান মাস ছাড়া অন্য সময়ও আদায় করা চলে। মানতাদি ছাড়া যে কোন সময় নিয়ত করিয়া এ'তেকাফ করাকে বলা হয় মোস্তাহাব বা নফল এ'তেকাফ। ইহার কোন নির্দিষ্ট মুদ্দত নাই। একদিন, তিনদিন, দশদিন যাহা ইচ্ছা করিতে পারে এমন কি মাত্র একঘন্টাও করিতে কোন বাধা নাই। 

এতেকাফের নিয়ম-কানুন

  • ১। রোযা রাখিয়া এ'তেকাফ করা বিধেয়।
  • ২। এ'তেকাফের নিয়ত করিতে হয়।
  • ৩। এ'তেকাফে যেইদিন বসিবে আছরের নামাযের পর হইতে বসিবে।
  • ৪। এ'তেকাফ যেই ভঙ্গ করিবে আছরের নামাযের পরে ভঙ্গ করিবে।
  • ৫। পাক-পবিত্রভাবে এ'তেকাফে বসিবে ।
  • ৬। জুনুব পুরুষ এবং হায়েয নেফাসওয়ালী রমনী ও পাগল ব্যক্তি এ'তেকাফে বসিবে না ।
  • ৭ । আকেল ও বালেগ ব্যক্তিবর্গ এতেকাফে বসিবে।
  • ৮। জামায়াতের নামায অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে এ'তেকাফ করিতে হয়। স্ত্রীলেকাগণ গৃহের কোন নির্জন প্রকোষ্ঠে বসিয়া এ'তেকাফ করিবে ।

এতেকাফে বসিয়া কি করা কর্তব্য

  • ১। এ'তেকাফে বসিয়া ওয়াক্ত মত পাঞ্জেগানা নামায এবং জুমুয়ার নামায আদায় করিবে।
  • ২। এ'তেকাফে বসিয়া বেশি পরিমাণে নফল নামায আদায় করিবে।
  • ৩। এ'তেকাফে বসিয়া তাসবীহ তাহলীল ও নফল নামায আদায় করা উত্তম ।
  • ৪ । এ'তেকাফে বসিয়া যিকির আযকর করিবে।
  • ৫। এ'তেকাফে বসিয়া কোরআন তেলাওয়াত করিবে।
  • ৬। এ'তেকাফে বসিয়া ধর্মালোচনা ও মাসয়ালা-মাসায়েলাদি শিক্ষা করিবে ।
  • ৭। এ'তেকাফে বসিয়া ধর্মীয় কিতাবাদি অধ্যয়ন করিবে।
  • ৮। এ'তেকাফে বসিয়া দরূদ শরীফ পাঠ করিবে |
  • ৯। এ'তেকাফে বসিয়া ধর্মীয় ওয়াজ-নসীহত করিবে বা শ্রবণ করিবে।

এতেকাফে বসিয়া জায়েয কার্যসমূহ

  • ১। এ'তেকাফকারী অযু, গোসল উপলক্ষে বাহিরে যাওয়া ।
  • ২। এ'তেকাফকারী পায়খানা প্রসাব করিতে বাহিরে যাওয়া।
  • ৩। এ'তেকাফকারী যে মসজিদে এ'তেকাফে আছে সেই মসজিদে জুমুয়ার নামায না
  • হইলে জুমুয়ার নামায পড়িতে অন্য মসজিদে যাওয়া। 
  • ৪। এ'তেকাফকারীর মসজিদে বসিয়া খানা খাইবার ব্যবস্থা না থাকিলে অন্যত্র খানা খাইবার জন্য গমন করা ।
  • ৫। এ'তেকাফকারীর নিদ্রা আসিলে নিদ্রা যাওয়া ।
  • ৬। এ'তেকাফকারী বাহিরে কোন বালক-বালিকা আগুনে পুড়িয়া মারা যাইতে থাকিলে বা জলমগ্ন হইয়া পড়িলে ইহাদিগকে উদ্ধার করিতে বাহিরে যাওয়া ।

ইহা ছাড়া একই জাতীয় অন্যান্য কঠিন বিপদাপদে বিপদাপন্নকে সাহায্য করিতে যাওয়া । অবশ্য এইজন্য এ'তেকাফের কাজা আদায় করিতে হয় । পাঠকগণ! স্মরণ রাখিবেন, অনেক এ'তেকাফে থাকিয়া অনেক সময় কোনরূপ ইবাদত-বন্দেগী বা তাসবীহ-তাহলীল কিছুই না করিয়া দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চুপ করিয়া থাকে। এইরূপ চুপ করিয়া থাকা মাকরূহ ।

এতেকাফ ভঙ্গকারী কার্যসমূহ

  • ১। শরীয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া মসজিদ হইতে বাহিরে গমন করা ।
  • ২। শরয়ী ওজরে বাহিরে যাইয়া বিনা প্রয়োজনে অনেক সময় বাহিরে কাটাইয়া দেওয়া ।
  • ৩। এ'তেকাফে বসিয়া দুনিয়াবী কথাবার্তা বা গল্প গুজব করা ।
  • ৪ । এ'তেকাফে বসিয়া কোন জিনিস বেচাকেনা করিলে ।
  • ৫। এ'তেকাফে বসিয়া দুনিয়াবী কোন কাজকর্ম করা ।
  • ৬। এ'তেকাফে বসিয়া সজ্ঞানে বা ভুলে স্ত্রী সহবাস করিলে ।
  • ৭ । এ'তেকাফকারী স্ত্রীকে নিয়ে কামকেলী করিলে
  • ৮। এ'তেকাফকারী কোন রমণী দেখিয়া মনি নির্গত হইল । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ